এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

উজান উপাধ্যায়




কবিতা
(গদ‍্য কবিতা ও সাধারণ বিভাগ)




সাপলুডো খেলা

তোমাকে এখন আর কাছে চাইছিনা। বারান্দায় গুটিসুটি মেরে যতই করুণ ভাবে চেয়ে থেকে আহ্লাদের প্রত্যাশা কর, উপেক্ষা করছি তোমায়, জেনে রাখো। চুল আঁচড়িয়ে তেল মাখিয়ে বুকের মধ্যে মিশিয়ে নিতে যা যা লাগে রুমালের ভাঁজে সেসব রেখেছো যত্নে মুড়িয়ে-আমি জানি। বাদামী রঙের গাঢ় এক শৈশব বোতামের ঘর কেটে সুতোর ঘূর্ণিপাকে নিষ্পাপ তাকিয়ে থেকেছে। যদিও এসব সরলমতি মোহে আমি ভুলছি না আর। কোমল প্রাণোচ্ছল হাসি মায়ালু কুসুম স্নেহ রসে আশ্লিষ্ট ত্বক আমাকে মুদ্রা-বিকল্পের স্বস্তি দেবেনা। আমি তো নাগরদোলা খুঁজেই নিয়েছি। উল্লম্ব বৃত্তের ভিতরে তুমি ঢুকে পড়তে পারো, জেনো একটি হ্যাঁচকা টানে তোমার আদুরে আঙ্গুল মট্ করে ভেঙে দেবো প্রবল ঈর্ষাদের একপাত্রে ঢেলে। এইভাবে ফাঁদ পেতে পেতে... ধাপে ধাপে-- রোদের ভিতরে রোদ,মেঘের ভিতরে মেঘ,বৃষ্টিচোখে কাজলের রেখা, রাতের গভীরে রাত মিশিয়ে দিয়েছি আজ  হলদে বিষাদ আঁকা বিপন্ন মলাটে। আহত নিবিড় বোধ ঝুঁকেছে আমার ভিতরে তবু ঝুপ করে চরম সতর্কতা জারি করা আছে।পুরনো খামের গায়ে স্যাঁতসেঁতে ঘাম সুহৃদ অবয়বে বারবার ছুঁয়ে যেতে চাও অষ্টাদশী তন্বীর রূপান্তরিত আত্মার জলবিভাজনে। জেনে রাখো তবু আর কাছে চাইছিনা নরম বালিশ-- বিছানা প্রশ্রয়।কুটিল গ্রন্থির পাকা ছকে সিঁধে করে দেবো গায়ের জামায় রাখা সহজ পাঠের মুখ। হরফে হরফে। তোমাকে এড়িয়ে চলার বাণী আমি যে নিপুণ ভাবে রপ্ত করেছি।আমাকে হতেই হবে রাজরাজেশ্বর----এইবেলা গোটা পৃথিবীর মালিকানা বুঝে নিতে হবে।





বৃত্ত অধ্যায়


■শেষপ‍র্ব

রোজ একটা বৃত্ত আঁকি।কিছু দাগ মুছে গিয়ে বৃত্ত মুক্ত হতে চায়।পুনরায় ঘেরাও করে নেওয়ার অনিঃশেষ অধ্যায় ।

■আরোহন

ভ্রাম্যমাণ গ্রহটির কক্ষ ছদ্মবেশে ঘেরাটোপ বানিয়ে রেখেছে।কক্ষপথ থেকে পালিয়ে যাবার পথে আত্মহত্যা নামের এক বিজ্ঞাপন ঝুলে থাকে।

■অস্থিরতা

শুরুতেই দ্বিধাগ্রস্থ ধোঁয়ার বলয়।ধূমকেতু চলনের বক্রমেজাজে অনির্ধারিত  শূন্যদাগে অনন্তের সম্ভাবনা অনিশ্চিত সঞ্চারে আবছায়া রেখে রেখে যায়।

■আবহমান

কোটরের ষোলোকলা সাঙ্গ হলেই কি সবটুকু ফুরিয়ে যাবার ! ছাইভস্ম,ধূলোবালি ছিটকে ছিটকে পড়ে অবিচ্ছিন্ন বাঁকে স্রোতস্বিনী ঝর্ণার মত অন্তঃক্ষরিত নির্যাসে মোহনায় মেশে। মোহনায় সবকিছু শেষ নাকি শুরু হয় ?

■রাস্তার ধাঁধা

বেরিয়ে পড়ার সব গুলো মুখ কেউ যদি আটকে দেয় , ফ্রেমের বাইরের কোন হাত একটি দরজা ঔদ্ধত্যের তীব্র কষাঘাতে পুরোপুরি ভেঙে বেরিয়ে পড়াই যায়।মুক্তি ওভাবে আসেনা।সব দরজা একসাথে ভাঙতে হয় বিনা কৈফিয়ৎ এ।

■শুরুর ঘোষণা

স্পর্শকের অব্যক্ত অনুগ্রহে বৃত্তরা বড় ছোট হতে হতে অন্তরীক্ষে শাশ্বত শ্বাসছন্দে বিপুল তরঙ্গ মিলেমিশে যায়।

■ পুনশ্চঃ

অক্ষম ঋজুতা অনিবার্য কোনও দিন ই নয়।

■উদ্বোধন

শুরু আর শেষ ভিন্নতার ওমে চিরায়ত ভ্রম । নিরীক্ষার আড়ম্বরে সমাধিস্থ অনিশ্চিত আত্মদহন।




অভিসার


আজকাল পৃথিবীকে বড় ভালো লাগে।
আপাদমস্তক জীবনের জন্য পেতে রাখা কোমল আঁচল ---
ভালো লাগে।
নরম তুলতুলে ঘুমের মত প্রিয় লাগে।
ভোরের মিঠে জানলায় লেগে থাকা একটি নিবিড় পাপড়িতে বহুবর্ণী পবিত্র স্লোক-
ভিজে যাওয়া চুলে অপরূপ লাগে -স্নিগ্ধ চন্দন ...
আমি কবি -
পৃথিবীর কবি-
ক্ষুদ্র এই জনপদে যাপনের মুহূর্তের খন্ডে খন্ডে অখণ্ড ভুবন পেয়ে যাই।
পৌঁছে যাই সুমহান পৃথিবীর উষ্ণতম জলপ্রপাতে । চোখ মেলতেই যেকোনও অরণ্য,টিলা, দীর্ঘতমনদী শীতল ধবল এক পাহাড়চূড়ায়।
বরফের আস্তরণ ছুঁয়ে দুই হাতে লাভা মেখে পলাশে শিমুলে কৃষ্ণচূড়ায়
অরেলিয়া আমাজনে সেরে নিই বিশ্বভ্রমণ।
ভালো লাগে পৃথিবীকে।
প্রিয় সব মানুষের প্রিয় সব মানুষির স্পর্শে লেগে যায় জরা দুঃখ বেদনার করপুট সুখের ধবল জ্যোৎস্না জোনাকি।
পরীর মত , কুহেলিকা মুড়ে রাখা প্রেমিকার চোখ...
দুষ্টু কুকুর ছানা
মিছিল শহর মিনমিনে আলো জ্বলা চায়ের আখরা
উৎসবের মুখে বানভাসি ভেসে যাওয়া ঘর
দীর্ঘশ্বাস ফুরোবার আগে মানুষের পাশে আরও মানুষেরা
শাঁখের আওয়াজ আর সন্ধ্যা আরতি
আকাশে ফুটতে থাকা অন্য ছায়াছবি
তারাদের ব্যস্ততা রাতের সংসার।
আমি কবি.....
অপার আলোর স্রোতে নিসর্গে ডুবি,
ঘুম যাই মগ্ন আঁধারে....
চিরজীবী পতঙ্গের ওম পেতে রাখি ,
সহস্র বছরের অফুরন্ত অভিসারে।




প্রথম আখ্যান

বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা প্রাচীন নারীর চোখ থেকে আসে ।
যে নারী পৃথিবীর প্রথম প্রেমিকা ।
আর যত বৃষ্টিকণা, তার দুঃখ সুখ
আর সেই মেঘলা আকাশ ---
অনুনাদে ছুঁয়ে গেছে
প্রতিশ্রুত অনাবিল নদী ।
নদীতেই ডুবে আছে প্রেম ,
নারীটির নিবিড় কথন ।
বৃষ্টিতে ভিজে সব গাছ ,
ঢেউ ওঠে প্রাচীন শরীরে ।
চরাচরে উষ্ণ বাতাস --
নারীটির জলজ প্রণয় ;

ছায়া পাতে মায়াবী বিছানা -
ঘুম যায় কলঙ্কিনী চাঁদ ;

কান্না মিশে হীরের গয়না
নারী তার শরীরে জড়ায় ।
প্রাচীন গল্পের গা ঘেঁষে
আরো সব বৃষ্টি ধেয়ে আসে ।

অনিবার্য এ প্রেমের
শ্রাবণ--উপাখ্যান শূণ্যতায় ভাসে।


উজান উপাধ্যায়

প্রকৃত নাম : প্রণব চক্রবর্ত্তী
ঠিকানা :গঙ্গাপুর বৈশালী দত্তপুকুর
(বারাসাত এর নিকট)
উত্তর ২৪ পরগনা
পিনকোড ৭৪৩২৪৮
ফোন ৯৮৩১১৮২৮৮১//৮০১৭২০৯৫৪১
মেইল আইডি pranabsir.physics@gmail.com
পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক
কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র

No comments:

Post a Comment