প্রবন্ধ
চার্বাক দর্শন ও স্মৃতি
চার্বাক-সিদ্ধান্তের তাৎপর্যটা হল যে–
‘চৈতন্য ভৌতিক প্রাণিদেহেরই একটি বিশেষ গুণ– এই সিদ্ধান্তের তাৎপর্য সুদূরপ্রসারী। তা হলে দেহব্যতিরিক্ত, দেহবহির্ভূত চৈতন্যময় আত্মা নামক কোনো স্বতন্ত্র অজর অমর পদার্থ নেই যে পদার্থটি জন্ম-জন্মান্তর পরিভ্রমণের পর, সংসার চক্রের বাইরে ঈশ্বরের দরবারে মুক্ত পুরুষ রূপে অবস্থান করে। স্বতন্ত্র আত্মা না থাকলে, জন্ম-জন্মান্তর, পূর্বজন্মের কর্মফল, অদৃষ্ট, স্বর্গ নরক, পারলৌকিক মুক্তি, সৃষ্টিকর্তা ও মুক্তিদাতা ঈশ্বর সব কিছুই অনাবশ্যক বলে বাতিল হয়ে যায়।’- (চার্বাকদর্শন, পৃষ্ঠা-৩১)
.
দেহাত্মবাদের বিরুদ্ধে আরো নানা যুক্তির মধ্যে আরেকটি যুক্তি তুলনায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে হয়। ভারতীয় দার্শনিক সাহিত্যে তার্কিক হিসেবে এঁদের কোনোমতেই তুচ্ছ ভাবা যায় না। তাই এঁরা যে-যুক্তির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন তাও সহজে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
যুক্তিটির মূল কথা হলো স্মৃতির সাক্ষ্য। একথা না-মানার কোন কারণ নেই যে, বাল্যকালের অভিজ্ঞতা যৌবনে– এবং যৌবনের অভিজ্ঞতা বার্ধক্যকালে– স্মরণ হয়। কিন্তু বাল্যদেহ, যৌবনের দেহ ও বৃদ্ধদেহ অবশ্যই এক নয়। দেহ হিসেবে এগুলির মধ্যে এমনই মৌলিক পার্থক্য যে বরং এগুলির প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন দেহ বলে বিবেচিত হবার কথা।
.
দেহাত্মবাদের বিরুদ্ধে আরো নানা যুক্তির মধ্যে আরেকটি যুক্তি তুলনায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে হয়। ভারতীয় দার্শনিক সাহিত্যে তার্কিক হিসেবে এঁদের কোনোমতেই তুচ্ছ ভাবা যায় না। তাই এঁরা যে-যুক্তির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন তাও সহজে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
যুক্তিটির মূল কথা হলো স্মৃতির সাক্ষ্য। একথা না-মানার কোন কারণ নেই যে, বাল্যকালের অভিজ্ঞতা যৌবনে– এবং যৌবনের অভিজ্ঞতা বার্ধক্যকালে– স্মরণ হয়। কিন্তু বাল্যদেহ, যৌবনের দেহ ও বৃদ্ধদেহ অবশ্যই এক নয়। দেহ হিসেবে এগুলির মধ্যে এমনই মৌলিক পার্থক্য যে বরং এগুলির প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন দেহ বলে বিবেচিত হবার কথা।
প্রাচীন দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অধুনালভ্য বৈজ্ঞানিক তথ্যের সম্পর্কের মধ্যেই জবাবটি নিহিত। বিজ্ঞানের ইতিহাসে স্মৃতি বলে ঘটনাটির রহস্য উদ্ঘাটনের প্রয়াস শুধু আজকের ব্যাপার নয়। আমাদের বর্তমান আলোচনার পক্ষে যেটা সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক কথা তা হচ্ছে আজকের বিজ্ঞান স্মৃতির ব্যাখ্যায় যতটুকু সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পেয়েছে তার মূলে শরীর বা দেহ প্রসঙ্গেই গভীরতর জ্ঞান। দেহকে বাদ দিয়ে নয়, বরং দেহকে আরো ভালো করে বুঝেই আজ স্মৃতির সন্তোষজনক ব্যাখ্যার দিকে অগ্রগতি।
তাহলে প্রাচীন দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে কোথায় আমরা ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানের প্রতিশ্রুতি পেতে পারি? দেহাত্মবাদের মধ্যে, না কি তার বিরুদ্ধমত আত্মবাদের মধ্যে? ঐতিহাসিকভাবে চার্বাকদের পক্ষে স্মৃতির রহস্য কতটুকু জানা ছিলো, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করে লাভ নেই। সমস্যাটা নিয়ে তাঁরা একান্তই মাথা ঘামিয়েছিলেন কিনা, তাও আমাদের জানা নেই। কিন্তু এটুকু বুঝতে নিশ্চয়ই অসুবিধে হবার কথা নয় যে তাঁদের বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেই বিজ্ঞানের বীজ খুঁজে পাবার কথা– কারণ, বিজ্ঞান স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির উপর প্রতিষ্ঠিত।
তাহলে প্রাচীন দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে কোথায় আমরা ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানের প্রতিশ্রুতি পেতে পারি? দেহাত্মবাদের মধ্যে, না কি তার বিরুদ্ধমত আত্মবাদের মধ্যে? ঐতিহাসিকভাবে চার্বাকদের পক্ষে স্মৃতির রহস্য কতটুকু জানা ছিলো, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করে লাভ নেই। সমস্যাটা নিয়ে তাঁরা একান্তই মাথা ঘামিয়েছিলেন কিনা, তাও আমাদের জানা নেই। কিন্তু এটুকু বুঝতে নিশ্চয়ই অসুবিধে হবার কথা নয় যে তাঁদের বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেই বিজ্ঞানের বীজ খুঁজে পাবার কথা– কারণ, বিজ্ঞান স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির উপর প্রতিষ্ঠিত।
পবিত্র চক্রবর্তী |
Facebook Page link: - https://m.facebook.com/Aut horPobitraChakraborty/
এস -৩৪ , শ্রমিক মঙ্গল কো- অপ
সেক্টর -২এ, বিধান নগর ,
জেলা – বর্ধমান
দুর্গাপুর -৭১৩২১২ , পশ্চিম বঙ্গ,
ভারতবর্ষ
No comments:
Post a Comment