এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

রাজর্ষি বর্ধন




ছোট গল্প




ভাগ্য লিখন


-এই যে দাদা শুনছেন ?
-হ্যাঁ , শুনতে বেশ পাচ্ছি !
-বাহ! বলছি খবর কি ?
-কেন দাদা! খবরের কি অভাব পড়েছে আপনার ? চারিদিকে এতো খবরের মেলা , খবরের কাগজ থেকে আরম্ভ করে রেডিও – টিভি মায় মোবাইলেও সর্বক্ষণ খবরের ছড়াছড়ি , তাও খবর নিতে অচেনা লোকের কাছে ছুটে আসতে হচ্ছে ?
-একেবারে ন্যায্য কথাটি বলেছেন দাদা! এখন খবরের অভাব নেই মোটেই ! তবে সে সব খবরে আমার আগ্রহ নেই মোটেই – আমার আসলে মানুষের খবরাখবর নেওয়ার বাতিক রয়েছে ! যেমন আপনি এখন ৩৮ নম্বর বাস্টা ধরবার জন্য ছুটছেন , সেখানে থেকে কালিকাপুর নেমে বসাকপাড়া জাবেন বলে !
-বাবা! আপনাকে আমি পাঁচ মিনিট আগেও দেখিনি , আপনিও তাই , কিন্তু আপনি আমার ব্যাপারে এতো কিছু এর মধ্যেই বলে দিলেন !
-আসলে ওটাই আমার কাজ – মানে পেশা কিনা ! মানুষের ভাগ্য লিখন খতিয়ে দেখার জন্য মানুষের খবরাখবর রাখার বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়ে আর কী !
-বাপ রে ! আপনি যে জ্যোতিষী তা আগে বলেন নি কেন ?
-না , মানে বলার ফুরসতটা এখনই পেলাম কিনা ! জ্যোতিষী বললে ব্যপারটা কেমন খাটো হয়ে যায় ! আর ওনারা সব গ্রহ- নক্ষত্র ঘাটাঘাটি করে সবকিছুর নিদান দেন , আমি ওসব মহাজাগতিক জিনিষ নিয়ে মাথা ঘামাই না । আমি মানুষের মুখ দেখেই বলে দিতে পারি তার ব্যাপারে !
- অ ! বাহ ! বেশ – আপনি তো বেশ অল্প বয়সেই অনেকটা এগিয়ে গেছেন । এই বয়সেই আপনি আপনার কেরিয়ারের জন্য বেশি ডেডিকেটেড ! এমন নির্ভুলভাবে বলে যাচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে আপনি বেশ ভালই প্রগ্রেস করবেন ! আপনাদের ইয়ং জেনারেশনের উন্নতি দেখলেও ভালো লাগে ! নিজেদের যুবক বয়সের কথা মনে পড়ে যায় !
- তা কেরিয়ারে উন্নতি কে না চায় বলুন ! সবাই নিজের ভালো চায় । কিন্তু আপনি নিজের ভাগ্নির এমন সর্বনাশটা করতে চলেছেন কেন ?
- মানে ? কি বলতে চাইচেন ?
- বলতে বাধ্য হচ্ছি ! নইলে এতো ভালো পাত্র থাকতে আপনি ভাগ্নিকে এমন ভাবে জলে ফেলে দেবেন !
- জলে ফেলব ? ঠিক বুঝলাম না তো ? যে ভাগ্নির পাত্র দেখবার জন্য আমি দৌড়ে বাস ধরছি এই বয়সেও , এসব কি ফালতু বলে মনে হচ্ছে !
- আর ছুটে বাস ধরে কি করবেন ! অ বাসে আপনি উঠতে পারবেন না , বেজায় ভিড় ! তা যেটা বলছিলাম ,আপনার ভাগ্নি তো বেশ শিক্ষিতা , একই সঙ্গে সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতী , তার জন্য এমন বাজে পাত্র বাছলেন কেন বলুন তো ?
- আচ্ছা তখন থেকে এমন কথা বলছেন কেন বলুন তো ? আমি ভাগ্নির জন্য যে পাত্র বেছেছেন , তাকে কি আপনি নিজের চোখে দেখেছেন ? যে বসাকপাড়ায় আমি যাচ্ছি , সেখানকার সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে সে , চৌধুরী বংশ !
- জানি জানি , তাদের বিশেষ প্রতিপত্তি ! চারপুরুস ধরে নিজেদের প্রতিপত্তি তারা বজায় রেখেছে । সে ছেলেও বেশ কৃতী – আই আই টি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে বড় কোম্পানিতে চাকরি করত , তারপর নিজেরই কোম্পানি খুলেছে ! সেই কোম্পানিও দুবছরে বেশ ফুলে ফেপে উঠেছে !
- বাপরে ! আপনার তো জানার আর কিছুই বাকি নেই !
- আরও শুনবেন ! সে ছেলে ভালো ছবি আঁকতে পারে , সাঁতরে নদী এপার ওপার করতে পারে । কলকাতার বড় ক্লাবে ব্যাডমিন্টন এবং ঘোড়া চালানোতেও চ্যাম্পিয়ান ! কিন্তু এসব হলে কি হবে , ডাহা কুঁড়ে !
- বলেন কি ! অমন সাকসেসফুল ছেলে কিনা কুঁড়ে ! আপনার মুখে দেখছি কোন লাগামই নেই , যা খুশি বলে যাচ্ছেন !
- খারাপ কি আর বললুম বলুন ! দিনে যদি আট ঘণ্টা ঘুমায় তাকে কুঁড়ে ছাড়া কি বলব !
- এয়া ! তা আপনি নিজে দিনে কতক্ষণ ঘুমন – চার ঘণ্টা ! দিনরাত প্রান পাত করে যে অতো খাটে সে মানুষটা কি আট ঘণ্টাও ঘুমোতে পারবে না ! তেমন ধরলে তো সবাই কুঁড়ে – এমনকি প্রেসিডেন্ট ওবামাও কুঁড়ে আপনার হিসেবে !
- আপনার কথা ঠিক হলেও পুরোপুরি ঠিক নয় । কিছু গলদ রয়েই গেছে । যেমন ওবামা আর প্রেসিডেন্ট নন ! আর রাতে টানা আট ঘণ্টা ঘুমলে কেউ কিছু বলত না ! কিন্তু সে ছেলে ঘুমায় ক্ষেপে ক্ষেপে । দেখা যায় অফিসে কাজের ফাঁকে ঘুমিয়ে পড়েছে । যে কেউ তাকে দেখলে বলবে সে অলস এবং কুঁড়ে ! এমনটা কি ঠিক বলুন ? সে একজন কোম্পানির মালিক , সেই যদি কাজের মাঝে ঘুমায় তাহলে কর্মচারীদের সামনে তার সম্মানটা থাকে ?
- আরে লোকে কে কী বলল সেটা নিয়ে কে মাথা ঘামাচ্ছে ! আর সে যে অফিসে ঘুমায় তা আপনি জানলেন কী করে ? তার অফিসে গিয়ে উকি মেরেছেন নাকি ?
- আপনি কি আমার পেশাটা ভুলে গেলেন ?
- মানে ? আপনি হাত গুনে এতদুর দেখলেন নাকি ? না মশাই – এবার আমার মনে সন্দেহ জাগছে ! এর জন্যই লোকে জ্যোতিষীদের ভণ্ড বলে ! যার ব্যাপারে এতো কিছু বললেন , তাকে তো আপনি চোখেই দেখেননি , তা কেবলমাত্র গণনা করে এতো কিছু বলে দেওয়া কি সম্ভব ? কেউ বললে বিশ্বাস করবে ?
- যারা করবে না তারা ভুগবে ! আর এখন অসম্ভব বলে কিছু হয় নাকি ? আপনিই তো বললেন এখন লোকেদের হাতের মুঠোয় সব কিছু এসে যাচ্ছে , এ সবই হয়েছে উন্নতমানের টেকনলজির প্রভাবে ! প্রথমে টু জি , তার পর থ্রি জি , ফোর জি থকে শুরু করে এখন ফাইভ জি’ও এলো বলে ! এর সাথে সাথে আমাদের গণনার যে প্রযুক্তি , সেটারও যে উন্নতি হবে এতো বলাই বাহুল্য ! এখন আর গণনা  আর ভাগ্য অন্বেষণের জন্য মক্কেলকে সামনে বসিয়ে আর হাতের রেখা দেখা হয় না , এখন মানুষের নাম শুনলেই তার ব্যাপারে বলে দেওয়া যায় ! এসবই হচ্ছে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার নবতম নেটওয়ার্কিঙের নিদর্শন !
- মাথার ভেতরটা কেমন গুলিয়ে গেলো মশাই ! মনে হচ্ছে পড়ে যাবো !
- নিজেকে সামলে নিন ! এত্বেই কাত হয়ে গেলেন , এর পর শুনবেন যার জন্য এই বয়সে নাভিশ্বাস উঠিয়ে প্রান হাতে করে বাস ধরতে ছুটছেন , সে ছেলেরই এখন বিয়ে করবার কোন ইচ্ছে নেই !
- অ্যাঁ ! কি বললেন ? বিয়ে করার ইচ্ছে নেই ?
- হ্যাঁ , এইমাত্র ওর মনের কথা পড়ে ফেললাম যে ! সবই উন্নত নেটওয়ার্কিঙের কামাল !
- তা কি পড়লেন একটু শোনাবেন কি ?
- শুনবেন ? আচ্ছা তাহলে বলি ! তার বিয়ে না করার প্রথম কারন সে এখন নিজের ব্যবসা বাড়াতে চায় , তাই এখন তাতেই ব্যস্ত থাকতে হবে ! আর দ্বিতীয় কারন হচ্ছে যে পাত্রীকে সে বিয়ে করতে চলেছে , সে ঠিকঠাক হলেও তার মামা লোকটি ঠিক সুবিধার নন , যেমন বদমেজাজি , তেমন কিপটে!
- অ্যাঁ ! আমি বদমেজাজি , কিপটে! এসব আপনি ওর মন পড়ে বুঝতে পেড়েছেন ! ইয়ার্কি মারার আর জায়গা পান না , দেবো মুখ ভেঙ্গে !
- সেটা করলে যে আপনার ভাগ্নির বিয়ের আরও অনিশ্চয়তা দেখা দেবে !
- কীভাবে ?
- কারন আপনি যার মুখ ভাঙবেন , সেই আমার নাম করুণাময় চৌধুরী !
- অ্যাঁ ! আ- আপ – মানে – তু – তুমি –
- হ্যাঁ ! আমিই সেই পাত্র যাকে দেখার জন্য আপনি এই বয়সে হাঁটুর বাত অগ্রাহ্য করে উসিয়ান বল্টের রেকর্ড ভেঙ্গে বাসে উঠতে যাচ্ছিলেন! আমিই সেই আই আই টি পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার যে কিনা সদ্য নিজের একটা আইটি ফার্ম খুলেছি ! আমিই যে কিনা দিনে আট ঘণ্টা ঘুমাই , টানা নয় – ক্ষেপে ক্ষেপে !
- তাহলে এই জ্যোতিষচর্চা ? আই মিন – এই সব ভাগ্যের লেখা পড়া-টড়া?
- আপাতত ওটা আমার ক্ষমতার বাইরে ! অবশ্য এখন আমার ভাগ্যের লিখন , মানে আমার বিয়ের ভাগ্যের লিখন আপনার ওপরেই নির্ভর করছে !
- অ্যাঁ ! মানে ?
- আওনি যে বাসটা ধরতে যাচ্ছিলেন , সেটা তো পাঁচ মিনিট আগেই বেরিয়ে গেছে ! আর যাকে দেখতে যাচ্ছেন , সে’ই যখন আপনার সামনে দাঁড়িয়ে তখন তো আর বাসের জন্য ছুটে লাভ নেই ! তাই বলছিলাম – যা কথাবার্তা এখানে দাঁড়িয়েই হয়ে যাক না !



****

RAJARSHI BARDHAN
243 BIPLABI SURYA SEN STREET,
TARAPUKUR WEST , AGARPARA,
KOLKATA – 700109

No comments:

Post a Comment