এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

সুতনু হালদার




কবিতা




ক্যাথারসিস

সমস্ত যন্ত্রণা দিয়ে ঢাকা
ধুলোগুলো ক্যাথারসিসের মত
আজও অনুভব করে অহল্যারা;
আপেক্ষিক তাপে-
নিস্তব্ধ বিষন্ন প্রহরের কোন এক স্পর্শে
যেন ফিরে পাবে প্রাণ...

প্লাবনের স্রোতে ঊর্দ্ধগামী জল,
জলের সকল অনুভূতি-
শস্যক্ষেতে কাদা হয়ে ধুয়ে যায়!

পদধূলিরঞ্জিত হওয়া হয়ে ওঠে না আজও...

নিয়মের ব্যতিরেকে সমস্ত
অভিশাপ, সব রকমের ক্ষয়
জেগে ওঠে বল্মীক স্তুপ থেকে!
ধ্বস লাগা পাহাড়িয়া পথে
অহল্যারা জেগে থাকে রাত...

অভিশাপ ধুয়ে যায়। পাথর ভাঙতে
আজ তার তাঁর পদস্পর্শ লাগে না...

সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় আজ একাই একশো-
                                                 সমস্ত উদ্ভিদকুল...


ভূলোক,ভূবর্লোক,স্বর্লোক-
আর একজন দেবতা:  
                       হিরণ্যগর্ভ অনন্ত...






মাস্টার মশায়

প্রথম নৌকো করে সন্ধ্যা থেকে রাত অব্ধি
ব্যাপ্ত চরাচরে বুক চিতিয়ে শুয়ে থেকে
গভীর রাতে বাড়ি ফিরে
মার খাওয়ার সাহসের
নাম ছিল অমর দা; আমার মাস্টার মশায়।

এক একটা জ্যোৎস্না যেমন-
মনের মধ্যে অজান্তে স্থান করে নিয়ে
ধূ ধূ প্রান্তরে শ্বাসপ্রশ্বাসের অঙ্গীকারের
মত গোনাগুন্তি ক্ষণিকের বিযোজনে
বুদ্বুদের মত মিলিয়ে যায়, তেমনই একদিন
অমরদাও মিলিয়ে গেল প্রান্তরের অবসাদ
মাখা মলিন আলপথে... একা।

অনেকদিন পরে একবার দেখা হয়েছিল ট্রেনে
আমিও ছিলাম সহযাত্রী...
হাতের তালুতে মুঠোবন্দি পুরো পৃথিবীকে
অস্বীকার করার মতো নদীর স্রোতে
অমর দার রূপালি হয়ে যাওয়া ক্ষীণ কেশ আর
নীরব বলিরেখাগুলো প্রতিসরাঙ্কের
কৌণিক দূরত্বকে চিহ্নিত করছিল;

আর দ্যাখা হয় নি...





স্ফুটনাঙ্কের ধ্বংসাবশেষ

সমস্ত শিশির বিন্দুতেও মিশে থাকে অবসাদ!
রক্তের ঘ্রাণে জেগে থাকে ফনা আর ফ্লোরা,
জৈবনিক ক্রিয়ার উত্তাপ
সহসা সূর্যের মত পবিত্র কিরণে
মনে পরে প্রথম প্রেমের তপ্ত নি:শ্বাস;

আজও সেই বিনা টিকেটের যাত্রীর
মত কোথাও কোন সংকোচে
জানালাতে উঁকি দিয়ে
তোমাকে খুঁজি...

স্ফুটনাঙ্কের  ধ্বংসাবশেষ...

                                 


অচেনা

রেল লাইনের ধারে থাকা সমাকীর্ণ পাথরের মত
আমাদের প্রত্যেকের জন্মজাত এই অপার দীর্ঘতা—
তাজা জীবাশ্ম হয়ে বয়ে চলে...
ইট-
       কাঠ-
                সৃষ্টি-
                         স্মৃতি-
                   ঘাস-
       পাথর-
ঘিলু-
নিস্তব্ধমৃত্যুক্ষণেআত্মাওআজকালবিভাজিতহয়েযায়!
বিমূর্ত অন্তরীক্ষ...
      খোদাই করা ইতিহাস আর নৈকট্যের পুনরু্ৎসাহ
এক প্রকার আত্মপ্রবঞ্চনা; বড়ই অচেনা এই মহাপ্রস্থানের পথ...

   


সন্ধান

দিগন্তরেখার সমস্ত পলেস্তারা খসিয়ে
আলুলায়িত শরীরবন্ধনে
        অশ্বত্থের শিকড়ের মত
প্রশ্নহীনভাবে বিবর্তিত হয়
                                        বুভুক্ষু শৈশবকাল!

          আমি দেখি, শুনি, চুপচাপ,
পাহাড়িয়া ঝর্ণার স্রোতে মিশে থাকে সমস্ত অনুতাপ...

অর্ধপোড়া নাভির মত মানুষের জীবন-
সাদা পাতায় গড্ডালিকাপ্রবাহ;
কোন বৃষ্টির জল বা রামধনু রঙের বর্ণচ্ছটা
আকাশগঙ্গায় দ্যাখা যায় না,
                      সমস্ত জল-কাদা সবই আমাদের,
                      মেনে চলে নিউটনের সূত্র...

শুধু হৃদয়ের সূত্রগুলোই অশ্বমেধের ঘোড়া,
শশকের মত দ্রুতগামী সমস্ত শিহরণে
আরো কিছু প্রতীক্ষা আরো কিছু বিষাদের ঝড়
ঘিরে থাকে সেইসব ইমান, তাই সহিষ্ণু ঘর
ক্রান্তিকালের আবছায়া ঘোর হয়ে যায় প্রতিক্ষণে...

শিকারি যুবকের মত ভেসে আসা
যাবতীয় কথামালা, সমস্ত সম্প্রীতি
                             ভোরাইয়ের সুরে আজও
      মাটিমাখা ফুলে খুঁজি যথারীতি...


*****

No comments:

Post a Comment