কবিতা
আমিও কি ছায়ার গান ?
কালো জলে নিজেরই ছায়া পড়ে আছে
ঢেউগুলি কম্পনের মাত্রা গোনে
বিকেলের বার্ধক্য এখন স্নানে নামে
দুয়ার খুলে দিয়ে হাওয়া অলীক পর্দা ওড়ায়
কে গান শোনাবে আর ?
হ্রেষারব চিন্ময় স্ট্যাচু হয়ে জাগে
দূরতর পাখির নকশায় মনে পড়ে কল্পনার কারুকাজ
রাস্তায় ধুলোর হাসি বয়ে নিয়ে যায় যুগান্তরের কালিদাস
বর্ষার ইংগিত বোঝে , ঘুরপাক খেতে থাকে প্রত্যয়ের হাঁস
ছায়াকে বিষণ্ণ লাগে খুব
আমিও কি ছায়ার গান ?
ক্লান্তির দোচালা খুলে উদাসীন হাটে
আমারই বেচাকেনা শেষ হয়
আমারই পুরোনো দিন নতুন রোদের শাড়ি পরে
ভালোবেসে এখানেই বাসর সাজাই
বাসরে গানের মরীচিকা, লতানো পাথুরে ফুল
রঙিন অথচ সূক্ষ্ম পরকীয়া...
কেউকে বলি না এসব
সংকটের তীরে ময়ূরেরা নেমেছে আজ
আমরা নৌকা ভাসাইনি
আলোর যুগ ভেবে ভেবে অন্ধকারের পরির কাছে অলীক সমর্পণ
একটাও নতুন বাঁশি কিনিনি
বাজাবার ইচ্ছে নেই
তোড়জোড়ের পাঁয়চারি নেই
হুকুমনামার বিলোল উত্থান শুধু
চাবুক হাতে শাসনের ভয় দেখায়
কার দেশ ? কী শাসন ?
মানবিক পর্যায়ের স্কুলগুলি ঘণ্টা দোলায়
কে দোলে তবে ?
বেইজ্জতির দাসত্বে মুগ্ধ নরনারী পাখনা মেলে উড়ে যেতে থাকে
কোথায় যায় কেউ জানে না —
অনবদ্য ইতিকথার ভেতর সূর্য ডোবে
ধান ভানতে ভানতে চোখ ছলকায়
বসন্তের বারুদ জ্বলে ওঠে
নাচের মুদ্রাগুলি অপেক্ষার উঠোনে
ছায়াগানের মনস্তত্ত্ব কুড়িয়ে নেয়
আমাদের ঘরে ফেরা হয় না
চোখের ভাষাও কাজললিপ্ত
অস্পষ্ট তাকিয়ে থাকে
দূরে কোনও বিহ্বল অরণ্যের পাহাড়ে
নেমে আসে অন্ধকারের ধুলো
কেউকে বলি না এসব
নিজে নিজে নিজেরই মস্তিষ্ক খরচ করে
শূন্য বলের মতো গড়াতে থাকি...
কতটা একা হলে
কতটা একা হওয়া দরকার
এই ভেবে মাটির কাছে আসি
গাছের সাথে কথা কই
পাখিদের গান শুনি
এইখানে নদীর বিহ্বল ঢেউ
দেখতে দেখতে উদাসী মায়ায় ডুবে যাই
পাতাগুলি নৌকা হয়ে ভাসে
আকাশে অলীক পাখি ডেকে যায়
কতটা একা হলে
আমি নিজেকেও ভুলে যেতে পারি
তৈমুর খান |
জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার রামপুরহাট ব্লকের পানিসাইল গ্রামে ।
মূলত নব্বই দশকের কবি ।
প্রকাশিত গ্রন্থ : কোথায় পা রাখি, বৃষ্টিতরু, খা শূন্য আমাকে খা, আয়নার ভেতর তু যন্ত্রণা, জ্বরের তাঁবুর নীচে বসন্তের ডাকঘর, একটা সাপ আর কুয়াশার সংলাপ, প্রত্নচরিত, নির্বাচিত কবিতা ইত্যাদি ।
পুরস্কার : কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার, দৌড় সাহিত্য সম্মান ।
খুব ভালো লাগল
ReplyDelete