এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

নাফছি জাহান




কবিতা




মনুষ্যত্ব

অনাদিকাল হতে বিরামহীন সর্বনাশা ভাবনা
উচ্ছ্বসিত হয়ে মনের গহীনে, সকলের অবচেতন মনে
আক্ষেপের জাল বুনে যাচ্ছে,
অপ্রত্যাশিত প্রত্যাশা পুঞ্জিভূত হচ্ছে
স্বভাবসিদ্ধ মূর্খের প্রতিচ্ছায়া রূপে সকলের অভ্যন্তরে।
অদৃষ্টের পরিহাসে, তোমার পাণ্ডিত্য ধূলোয় মিশ্রিত হচ্ছে,
আশ্চর্য হলেও সত্যি, তুমিও যে বোকার রাজ্যের
বিরামহীন চিরকালের অভিযাত্রী।
ধর্ম, কর্ম, জাত, বংশ-করছ বিভেদ দিবারাত
ক্ষুদ্রাকৃতির জীবন মায়ায়, যাচ্ছো ভুলে মানবধর্ম,
ভিন্ন ধর্মের বন্ধু পেয়ে, আক্ষেপ নেই কোনো আকারে
গর্বোজ্জ্বল ধর্মের অজুহাতে, উপেক্ষা করছ কেনো তাকে?
আজকে যদি রোগাক্রান্তে কাতর হও তুমি
সুনিশ্চিত দ্বারস্থ হবে বৃহৎ কোনো হসপিটালের করিডোরে,
হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান-করবেনা ধর্ম সেবা দান
মানব পরিচয়ে ডাক্তার রূপে, আসবে সকল এগিয়ে
সেবা নামের পরশমণি, ছুঁয়ে যাবে তোমার দেহে।
কোন সেই ধর্ম বিচ্ছেদ ঘটাবে?
অতিক্রান্ত ঐ হৃদয় বিদারক মুর্হূত,
কোনো ধ্বনিতরঙ্গ তোমার কর্ণপাতে বলে দিবে কি?
ভিন্ন ধর্মের ডাক্তার, সেবা করছে তোমায় পরম যত্নে,
সেই মুর্হূতে মন যদি বলে সেবা চাই, বাঁচতে চাই
তবে এই ক্ষণে কেন অবিবেচকের পাহাড় তুলে দিলে?
মনুষ্যত্বের এমন অবক্ষয় নিচ্ছো কেন মেনে?
মনুষ্যত্ব পরম ধর্ম, রাখো তাকে আগলিয়ে,
মানব পরিচয়ের বৃহৎ বাহক-
মনুষ্যত্ব সজাগ থাকুক সকলের অন্তরে।




রাখনি কথা, ভুলেছ নিমিষে

কথা ছিল- থাকবে পাশে জনমভর,
ভোরের মৃদু আলোয় মিষ্টি শিহরণে রাস্তা ধরে
খালি পায়ে পাশাপাশি হাঁটবো দু'জনে,
কথা ছিল- মেঘলা দিনে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ভেজা পিচডালা পথে
হেঁটে যাবো বহুদূরে আর ভিজবো হালকা বৃষ্টির ছোঁয়া গায়ে মেখে,
কথা রাখনি, তুমি তোমার দেয়া কথা রাখনি, ভুলেছ সব চিরতরে।
এমনটাও যে কথা ছিল- গোধূলি বিকেল শেষে রক্তিম সূর্য ডুবে
যখন সন্ধ্যা নেমে আসবে শহর বুকে
রিকশায় চড়ে ঘুড়বো শহরের এ প্রান্ত হতে ও প্রান্তে,
জ্যোৎস্না রাতে খোলা আকাশের নিচে ছাদে দু'জনে
গুণবো তারা কোনো এক রাত্রি জেগে আর গল্প করবে বিরতিহীন ভাবে।
মনে আছে তোমার? মনে পড়ে কি এ সব কথা?
কথা কি ছিল না বলো? রোজ ভালোবেসে গান শুনাবে নিশি রাতে,
ছোট্ট চাওয়া- নদীর বুকে নৌকায় ভাসবো তোমায় নিয়ে
সবই ভুলেছ, কাছে এসে হাত ধরেছ যতোটা সহজে
ছেড়ে দিয়েছ তার চেয়েও অধিক সহজলভ্য ভেবে।
মনে আছে কি তোমার? আঁধার ঘরে থাকতে ভালোবাসতাম একাকী মনে
আজো ভালোবাসি, আঁধারই যে বেঁচে থাকার সঙ্গী,
জানোতো? সে দিনের পর থেকে একটি রাতও ঘুমোতে পারিনি
কষ্ট চেপে ধরে বুকে, ভোর হয়ে যায় তবু ঘুম আসেনা চোখে,
কী, বিশ্বাস হচ্ছে না? বিশ্বাস কেনোই বা হবে, আমায়তো ভালোইবাসোনা।
তোমায় ভুলে থাকার অভিনয়টা করে যাচ্ছি খুব যতনে
এতটুকু কেন বোঝোনা, তোমায় ভুলে থাকা কোনো শর্তেই সম্ভব না,
বলেছিলে ভালো থেকো, কোনো উত্তর দিতে পারিনি
তোমার মন এটা বুঝতে পারেনি- তোমায় ছাড়া ভালো থাকা অসম্ভব ছাড়া আর কিছুই নয়,
তুমি ভালো থাকবে- এই ভেবে আড়াল করেছি নিজেকে।
কথা রাখনি, কোনো কথাই রাখনি,
কথা ছিল- কষ্টকে কাছে আসতে দেবেনা এক মুহূর্তও,
কোনো কিছুর বিনিময়ে ছেড়ে যাবেনা একা পথে,
চলে গেলে, সব কথা ভুলে জানিনা কোন অপরাধের সাজাস্বরূপ
আমায় কাঁদালে, একা ছিলাম, ভালোইতো ছিলাম,নিজের মতো বেঁচে ছিলাম
দু'দিনের জন্য এসে সব উলোট-পালোট করে দিয়ে কেন চলে গেলে?
কথা রাখনি, তুমি তোমার কোনো কথাই রাখনি
কতোটা ভালোবাসি তা বোঝার ক্ষমতা তোমার হয়নি
বেঁচে আছি, তোমার দেয়া কষ্ট বুকে বেঁচে আছি আজো,
হয়তো বেঁচে থাকবো, তবে জীবন্ত লাশ রূপে
যার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই, কোনো আশা নেই, যার দুঃখ-সুখের কোনো অনুভূতি নেই।


নাফছি জাহান

কাউতলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ
রাষ্ট্রবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্ট


No comments:

Post a Comment