এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

চারু



অনুগল্প




নাট্যশালা
   
শুরু হলো - ঘরে ফেরার পালা। কচিকাচাদের ক্লান্ত শরীর তখন ঘরমুখো। এমনকি মুক্ত আকাশের পাখিরাও বৃক্ষ শাখায় দিনশেষে কুঞ্জনে ব্যস্ত । শুধু ফেরার তারা নেই কিছু ল্যাংটা শিশুগুলোর । তারাও ভূমিষ্ঠ ধরিত্রী মার বুকে , তবে আশ্রয় তাদের উদার আকাশের নীচে । সত্যি তো এর থেকে বড় ছাদ আর কোথায় আছে ? অ- সাম্যের নাট্যশালায় আমরা সবাই নাট্যকর্মী । আর কিছু পরেই তাদের দেখা যাবে অফিস ফেরতা মানুষগুলোর সামনে ভিক্ষার কচি হাতগুলো প্রশস্ত । কেউ দয়া বশত কিছু দিলেও বেশিরভাগ তিরস্কারের  । সদ্য ফোটা ফুলগুলো অনাহার , অবহেলায় আবার কেউ বা শিকার চক্রান্তের ।

    নীলু , - বয়স তার ৬ । নামটা ভিখারীদের নেত্রী মাসী সবিতা রানীর দেওয়া । যাকে সে ছোটো থেকে মা বলে জানতো । তার আদেশে রোজ সকালে তিন - চারটি দল ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভিক্ষা করতে বেড়িয়ে পরে শহরের বুকে । নীলুর রাজের কোঠা 200 টাকা । দিনান্তে ওই টাকা তাকে মার হাতে তুলে দিতে হবে রোজ , না হলেই সে জানে কি তার শাস্তি ।

     কি ভুলে যে সে আজ হাত পাততে ভুলে গিয়ে মিশে গিয়েছিল খেলার মাঠে একঝাঁক কচিকাচাদের দলে ? হুঁশ ফেরে মাথার চুল ধরে ঝাঁকুনি খাওয়াতে । মাসি সবিতা রানীর এক দালাল কেষ্ট , যে তাদের উপর সদাই নজরে ব্যস্ত ।  " কিরে ভুলে গেছিস আজ 200 টাকা না দিতে পারলে ......। " সত্যি তো আজ তার ঝুলিতে মাত্র ৩০ টাকা । শিউরে ওঠে ছোট্টো শিশু , বড্ড ক্লান্ত সে । সেও স্বপ্ন দেখে আলোর ঠিকানার । ছোট্টো একটা পরিবারের , বাবা - মার ভালোবাসার । দূর থেকে কেউ যেন তাকে নীলু বলে ডাকে । বলে " খোকা ঘরে আয় সন্ধে হয়ে গেলো যে " । প্রতিবন্ধী সেই স্বপ্নটা তার স্বপ্ন দিয়েই সেজেছিল , মায়াবী আলোর শহুরে পথে । ক্যাচ করে একটা শব্দ , তারপর পৃথিবীর জঠরে নির্মম আঘাত । রক্তাত রাজপথে তখন শুধুই কোলাহল , আর তার মাঝে সুখ নিদ্রার ঘোরে নীলু শুনতে পায় দূর থেকে ভেসে আসে আজানের সুরে " খোকা ঘরে আয় , সন্ধে নামলো যে " ॥ .......


চারু

No comments:

Post a Comment