এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

কাব্যিকা দাশগুপ্ত




কবিতা



নারী

নারী তুমি পোশাক সামলাও
লজ্জা তোমার ভূষণ
অবাঞ্ছিত পোশাক দেখিয়ে
করো না দৃশ্যদূষন।।
অবাঞ্ছিত? বলো কি গো?
তবে পড়ারই কি দরকার?
পোশাক দেখালে মৃত্যুদণ্ড
বলেনি তো কোনো সরকার।
ওমা ছি ছি তা নয় তা নয়
নিয়ম তুমি জানো না?
পোশাক দেখালে পুরুষ জাতির
বাড়তে পারে উত্তেজনা।।
বলো কি তবে? ট্রামে বাসে
ওদেরও তো পোশাক সরে যায়
তখন তো কই নারী জাতি
পাগল হয় না উত্তেজনায়।
কেউ বলে না পোশাক ঢাকো
নিজের আব্রু বজায় রাখো।
তবে কি নারী জন্ম অপরাধ?
স্বাধীনতা শুধুই কেন পুরুষজাতির অবাধ?
চুপ করো শান্ত হও
কোরোনা কো প্রতিবাদ।
জানো না তুমি নারীজাতির
সবকিছুতেই বাঁধা হাত।।
বাঁধা হাত? কে বাঁধল?
কোথাকার কোন রাজপুত্তুর?
রূপকথা নয় বাস্তবেতে
নারীজাতি নিজেই নিজের শত্তুর।



(শিরোনাম হীন)

.................সিক্ত চোখ,
এলোমেলো স্বপ্নের ধ্বংসস্তূপ
মনের গভীরে কেঁদে যায় প্রেম,
শব্দহীন নিশ্চুপ।
প্রেম সে তো প্রেম নয়,
অপেক্ষা অন্তহীন।
সুখের সে স্মৃতি আজ
অশ্রুতে বিলীন।
কথার ভাঁজে তীব্র বিষ
আঘাত হানছে মনে।
পুড়ছে হৃদয় বাড়ছে ক্ষত
ধ্বংসের প্রহর গোনে।
স্বপ্ন দেখার শেষ হলো আজ
মিছে কথার ভিড়ে,
প্রেম তবু খুঁজে ফেরে
মনের মানুষটিরে।




(শিরোনাম হীন_ দুই)

তুই কি আমার দুঃখ হবি?
নয়তো চোখের জল?
শীতের রাতে শিশির ভেজা
স্বপ্ন হবি বল?
এক চিলতে রোদ হবি?
বৃষ্টি দিনের শেষে?
প্রেম হয়ে থাকবি নাকি
আমার মনের দেশে?
তুই কি আমার ইচ্ছে হবি?
ভাসবি আমার সাথে?
নয়তো একটা তারা হবি
আমার একলা রাতে।






ছোট গল্প




রহস্যময়ী

ঘড়িতে সময় তখন রাত 2টো। গভীর রাত, এক পরিচিত শব্দে জেগে ওঠে নীল। যেন কেউ ডাকছে, এ ডাক তার চেনা। তবে কি সে এসেছে আজ? সাড়া দিয়েছে তার ডাকে? বিছানা ছেড়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায় দরজার কাছে, দরজা পেরিয়ে বাগান, এই তো এখানেই তার আসার কথা ছিল। কিন্তু কই? কেউ তো নেই। তবে কি সে আসেনি? সবটাই মনের ভুল তবে? বিমর্ষ হয়ে পড়ে নীল। আর কত অপেক্ষা?
ফিরে আসে ঘরে, পড়ার টেবিলে মাথা নীচু
করে ভাবতে থাকে গত কয়েক মাস আগের ঘটনা। আর পাঁচটা দিনের মতোই উদ্দেশ্যহীন ভাবে হেঁটে চলেছিল নীল পাহাড়ি অঞ্চলের এবড়ো খেবড়ো রাস্তা ধরে, যেন কোনো রহস্যের সন্ধানে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সন্ধানে, সেখানেই সে প্রথম দেখেছিল মেয়েটিকে, দূরে একাকী দাঁড়িয়ে ছিল মেয়েটি। দেখে আর চোখ ফেরাতে পারেনি, মোহগ্রস্ত হয়ে এগিয়ে গিয়েছিল তার দিকে কিন্তু তখনই, তখনই হঠাত্ তিয়াস তাকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে চলে আসে। তিয়াস নীলের ছোট বেলার বন্ধু। সেদিন হঠাত্ সামনে চলে এসে প্রাণে বাঁচিয়েছিল নীলকে। নাহলে সেদিন প্রায় খাঁদের ধারে এসে পড়েছিল সে। আসলে সেই দিকে তার লক্ষ ছিলই না। সে হারিয়ে গিয়েছিল নিশার টানা টানা চোখে। " কিভাবে এখানে এলি? কোথায় যাচ্ছিলি এদিকে?" এমন অনেক প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পায় না তিয়াস। শুধু বোকা বোকা চোখে চেয়েছিল নীল। তখনও খুঁজছিল সেই অচেনা চোখ দুটো। একবার তিয়াসকে বলতে চেয়েছিল " মেয়েটাকে দেখলি?" বলতে পারলো না। কেমন বোকা বোকা লাগছিল নিজেকে। তিয়াসই বাড়ি অবধি ছেড়ে দিয়ে যায় সেদিন।মা খেতে ডাকলেও সাড়া দেয়নি। কারো সাথে কথা বলেনি, সেই চোখ দুটো ওকে তাড়া করে বেড়াচ্ছিল যেন। অথচ কাউকে কিছু বলার উপায় নেই। মেয়েটাকে কি আর কখনও দেখতে পাবে সে?
এতসব ভাবনার মাঝে রাত কখন কেটে গেল বুঝতেই পারলো না যেন। ঘড়ির আওয়াজে আর মায়ের হাতের ছোঁয়ায় ঘুম ভাঙে তার। ছুটে যেতে চায় সেখানে যদি আজ ও সে আসে? " কোথাও যাসনি বাবা, তোর তো খুব জ্বর" মায়ের কথায় বুঝতে পারে ঠিকই তো জ্বর একটু আছে। মনটা খারাপ হয়ে যায় নীলের। সেই চোখ দুটোর কথা মুহূর্তে মনে পড়ে যায় তার। না! যেতে তাকে হবেই। মা রান্নাঘরে যেতেই সেই সুযোগে নীল মায়ের চোখ এড়িয়ে বেরিয়ে যায়। পায়ে যেন কোনো জোর পাচ্ছেনা। টলমল পায়ে পৌঁছে গেল সেখানে। তারপর হঠাত্ই চোখের সামনেটা কেমন অন্ধকার নেমে এলো। আর কিছু মনে নেই তার, যখন চোখ খুলেছিল মনে হয়েছিল স্বপ্ন দেখছে, সেই চোখ দুটো বিস্ময় নিয়ে তাকেই দেখছে। নীল চোখ মেলাতে ওই চোখ দুটো যেন বড়ো স্বস্তি পেল। অনেক কষ্টে মেয়েটির কোলের থেকে মাথা তুলে উঠে বসার চেষ্টা করল নীল, অনেক কথাই বলতে চেয়েছিল মেয়েটিকে, হঠাত্ করে মেয়েটিকে সামনে পেয়ে যেন সবকিছু গুলিয়ে গিয়েছে ওর, মেয়েটি ও শান্ত চোখে চেয়েছিল ওর দিকে, "কি হয়েছিল আমার?" নীল জানতে চাইলো। মেয়েটি বললো  "তা তো জানিনা। আপনি বোধহয় অসুস্থ"। আবার প্রশ্ন করলো নীল, "তুমি কে?, নাম কি তোমার? কোথায় থাকো?" মেয়েটি মিষ্টি হেসে বললো, "আমি নিশা"।
আরও কত প্রশ্ন করলো নীল, সব শুনে নিশা খুব শান্ত ভাবে বললো "বাড়ি কোথায় আপনার?" কোনো কথার উত্তর না পেয়ে খানিকটা মনঃক্ষুন্ন হলো নীল,
বললো, " কাছেই"। "চলুন পৌঁছে দিয়ে আসি আপনাকে।" নিশা বললো। আরও কিছুক্ষণ থাকতে চাইছিল নীল, কিন্তু বলতে পারলো না। অগত্যা দুজনে হাঁটতে থাকলো বাড়ির দিকে। হঠাত্ই তিয়াস চলে আসে সেখানে। নীলকে একা একা হাঁটতে দেখে অবাক হয়ে জানতে চায়; " কীরে কোথায় ছিলি এতক্ষণ? কাকিমা যে চিন্তায় অস্থির, আমাকে পাঠালেন তোকে খুঁজতে, আর তুই একা ঘুরছিস কেন শরীর খারাপ নিয়ে?"হঠাত্ এত প্রশ্নের সম্মুখীন নীল কি বলবে ভেবে পায় না। ধীরে ধীরে বলে " একা কই? ও আছে তো।" " কার কথা বলছিস কেউ নেই এখানে" কাউকেই খুঁজে পায় না তিয়াস। "কি বলছিস ওই তো দেখ, ওর নাম নিশা" ঘুরে নিশার দিকে তাকাতেই অবাক হয় নীল, সত্যিই কেউ নেই। কোথায় গেল? এখানেই তো ছিল একটু আগে, ভাবতে থাকে নীল। কিছু বলতে পারেনা তিয়াসকে আর। "কে নিশা? কার কথা বলছিলি?" তিয়াস প্রশ্ন করে। কোনো উত্তর দেয় না নীল। অন্যমনস্ক ভাবে হাঁটতে থাকে। মা সত্যিই খুব বকেছিল সেদিন, কিন্তু নীলের মন খারাপ অন্য কারনে, তিয়াস টা যেন বারবার ইচ্ছে করেই ওদের মাঝে চলে আসছে, আলাদা করে দিচ্ছে ওদের। সে যাইহোক আজ নিশাকে অন্তত একটা ধন্যবাদ দেওয়া উচিত ছিলো। আরও একবার ওর দেখা পাওয়া দরকার, ভাবতে থাকে নীল। কিন্তু সকাল হতে যে কত দেরি, সময় যেন কাটতেই চায় না আজ, নীলের চোখে ও ঘুম নেই।
হঠাত্ জানালার দিকে চোখ যেতেই মনে হলো সেই চোখ দুটো যেন তাঁকেই দেখছে। জানালার কাছে ছুটে গেল নীল, কই কিছুই নেই। তাঁরই চোখের ভুল তবে। কেটে গেল অপেক্ষার সেই রাত।
সকালে অনেক বেলা হয়ে গেল ঘুম ভাঙতে, ভাঙতে।
"অনেক দেরি হয়ে গেল উঠতে, এক্ষুনি বেরানো দরকার," সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে রাস্তায় বেরায় নীল, মায়ের কথা কানেই যায় না তার, পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটতে থাকে সে, পৌঁছে যায় গন্তব্যে,  ফাঁকা জনমানবশূন্য রাস্তা, কোথাও কেউ নেই। নীল অপেক্ষায়, জানে সে আসবেই, এক ঘন্টা কেটে যায়, ক্রমে দুই ঘন্টা, সময় যেতে থাকে, কিন্তু সে আসে না, ক্রমে রাত হয়, সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে নীল, বাড়ি ফেরা হয় না তার।
গভীর রাতে ঘুম ভাঙে আলতো হাতের ছোঁয়ায়।
চোখ মেলে নীল, সেই দুটো চোখ, নিজের চোখে
বিশ্বাস হয় না নীলের, একি সত্যি না অবচেতন মনের কল্পনা? উঠে বসে নীল, "তুমি এখানে এত রাতে কীভাবে এলে?" জানতে চায় নীল, কোনো উত্তর দেয় না নিশা। রাতটা পূর্ণিমার এতক্ষণে লক্ষ্য করলো নীল, চাঁদের আলোয় মায়াবী লাগছে নিশাকে, একদৃষ্টিতে ওকে দেখছিল নীল, নিশা উঠে চলে যাচ্ছিল, নীলের প্রবল ইচ্ছে হলো হাত ধরে বাধা দেয় তাঁকে, সাহস পেল না, অস্ফুটে ডাকলো
"নিশা!"
নিশা থমকে দাঁড়ালো, যেন এই ডাক টার অপেক্ষাতেই ছিল সে, নীলের দিকে ফিরে বললো "এতো রাতে এভাবে রাস্তায় থাকা নিরাপদ নয়, বাড়ি ফিরে যান আপনি।"
নীল - তবে তুমিও যে রাস্তায়, সেটাও কি নিরাপদ?
যথারীতি কোনো উত্তর দেয় না নিশা।আবার চলে যেতে থাকে সে,
নীল বুঝতে পারে কথা শোনা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তার, নীরবে অনুসরণ করে নিশাকে, আর কোনো প্রশ্ন করেনা সে, বাড়ি ফিরে ঘুম আসেনি যথারীতি, নিশার কথা ভাবতেই ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তিয়াসের প্রতি রাগ টাও কমে গিয়েছিল তার।
পরদিন সকাল, যথাসময়ে নীল হাজির সেই খাদের ধারে, তবে আজ প্রকাশ্যে নয়, খানিকটা আড়ালে। অপেক্ষা করতে থাকলো, নিশা এলেই তাকে অনুসরণ করবে, চিনে নেবে তার বাড়ি। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা। অবশেষে দেখা দিল রহস্যময়ী। নীল আড়াল থেকেই লক্ষ্য করছিল নিশার গতিবিধি। নিশাকে বেশ অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিল, ইতস্তত খুঁজছিল কাকে যেন। নীল জানে কাকে খুঁজছে সে। অথচ আজ সে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, কিছুতেই দেখা দেবে না। কিছুক্ষণ পর নিশা চলে যেতে উদ্যত হলে নীল পিছু নিল। নিশা পাহাড়ি পথ ছেড়ে ধীরে ধীরে জঙ্গলের দিকে চলে গেল। গভীর জঙ্গলের মধ্যে যেন অদৃশ্য হয়ে গেল। নীল অনেক খুঁজেও সেখানে কোনো জন মানবের অস্তিত্ব পেল না। হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে যাবে, তখন ওর খেয়াল হলো ও জঙ্গলের পথে রাস্তা হারিয়েছে। এদিক ওদিক উদভ্রান্তের মতো পথ খুঁজতে লাগলো। হঠাত্ মাথায় একটা তীব্র আঘাত অনুভব করলো। লুটিয়ে পড়লো মাটিতে।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলো যখন, তখন নিজের বাড়িতেই ছিল নীল। আশেপাশে চিন্তিত পরিবারের সবাই ওকেই দেখছিল উত্সাহ নিয়ে। ও চোখ মেলতেই সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। নীল তখনও বুঝে উঠতে পারছিল না ও বাড়ি এলো কখন? কীভাবে? মাথায় তীব্র যন্ত্রনা তখন ও ছিল। শরীরটাও বেশ দুর্বল। গতরাতের ঘটনা গুলো যেন ঘুরে ফিরে মনে আসছিল। সবটাই যেন রহস্য। তবে এর একটা সমাধান দরকার। পরিবারের লোকজনের কথায় যতটুকু জানতে পারলো তার সংক্ষিপ্তসার এই যে, নীল অচেতন অবস্থায় বাড়ির বাগানে পড়েছিল। তার এই অবস্থা কিভাবে হলো কেউ জানে না।
নীল একবার বিছানা ছেড়ে ওঠার চেষ্টা করলো কিন্তু মায়ের কড়া পাহারায় আবার বাধ্য ছেলের মতো শুয়ে পড়তে হলো। মাথায় আঘাত লাগায় মাথার পিছনে একটা তীব্র যন্ত্রনা অনুভব করছিল। পরিবার পরিজন রা একে একে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল,
অনেক রাত অবধি নীলের ঘুম আসছিল না। ঘুমোনোর বৃথা চেষ্টা করতে করতে হাঁপিয়ে উঠলো ও। বিছানা ছেড়ে জানালার কাছে গিয়ে দাড়ালো। বাগানের দিক থেকে একটা ক্ষীণ নূপুরের শব্দ আসছিল। নীল গাছপালা খুব ভালোবাসে  ওর ঘরের ঠিক পাশেই বাগান টা।
যেদিকে থেকে শব্দটা আসছিল সেদিকে গেল, কোথাও কেউ নেই। শব্দটাও আর নেই।
ফিরে আসতে গিয়েই থমকালো, পিঠের উপর একটা মেয়েলি হাতের ছোঁয়া। পিছন ফিরে দেখলো নিশা দাড়িয়ে, "তুমি এখানে?" চমকে নয় প্রায় আঁতকে উঠলো নীল। রাত তিনটের সময় এমন দৃশ্য দেখার কথা ও বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেনি।
নিশা কোনো উত্তর দিচ্ছিল না, নীল আবার প্রশ্ন করলো, "তুমি এখানে কিভাবে এলে?"
"দরকার ছিল আসা টা"
"দরকার? আমার সাথে?"
"হ্যাঁ তোমার সাথেই"
"আচ্ছা বলো"
"আমার পিছু নিয়েছিলে কেন?"
"তুমি জানতে?"
"কেন গিয়েছিলে বলো?"
"না মানে আমি আর কি...." আমতা আমতা করতে থাকে নীল, কোনো কথা জোগাতে পারে না।
"শোনো আর কোনোদিন যেন তোমাকে ওই জঙ্গলের আশেপাশেও না দেখি।।"
নীলের হঠাত্ যেন মনে পড়লো জঙ্গলের কথা, মাথায় আঘাত লাগার কথা, এতক্ষণ কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। চোখের সামনে স্বপ্নের মতো শুধুই নিশা ছিল, হঠাত্ যেন স্বপ্নটা ভাঙলো।
নীল বললো, "তুমি জঙ্গলে কেন গিয়েছিলে? জানো আমার মাথায় কেউ একজন মারলো তারপর তো আর কিছুই মনে নেই, তোমাকেও তো আর দেখতে পেলাম না। কোথায় গিয়েছিলে তুমি?"
"আমি কোথাও যাইনি। তুমি হয়তো ভুল দেখেছ।"
"ভুল দেখেছি? কিন্তু আমি তো.."
"আর কোনো কিন্তু নয়। তুমি যাবে না ওখানে কথা দাও?"
"আচ্ছা তুমি যা বলবে।"
"বেশ, আমি তবে চলি"
"বলছিলাম, কাল?"
"কাল কি?"
"দেখা হবে তো?"
"হবে। আমি আবার আসব।"
"তুমি আসবে?"
"আসবো কথা দিচ্ছি, কিন্তু.."
"কিন্তু?"
"আমাকে খোঁজার চেষ্টা করো না তার আগে।"
"খুঁজব কেন? তুমি তো বললে আসবে"
"মনে থাকে যেন। এবার যাও ফিরে যাও"
পর্ব_ দুই
পরদিন সকাল সকাল তিয়াস এলো। নীলের তখনো ঘুম ভাঙেনি। তিয়াস এসে ডেকে তুললো। ঘুম জড়ানো চোখে নীল বললো, "তুই এতো সকালে?"
"সকাল আর নেই, বেলা হয়েছে। ওঠ কথা আছে।"
"কথা? বল। এই উঠে বসলাম। বল কি বলবি?"
"কোথায় গিয়েছিলি কাল?"
"কাল? আমি? কই না তো।" কথাটা এড়ানোর চেষ্টা করলো নীল।
"আমি দেখেছি তোকে। আমায় মিথ্যে বলে কোনো লাভ নেই।"
"কোথায় দেখেছিস?"
"ডাইনি মহলের দিকে যাচ্ছিলি। আমি দেখেছি"
"ডাইনি মহল? সেটা আবার কি জিনিস?"
"ওই জঙ্গলের ভিতর যেতে দেখে আমি তোর পিছু নেই। তারপর তুই কোথায় একটা হারিয়ে গেলি। শুনেছি জঙ্গলের ভিতর ওদিকে একটা বেশ পুরোনো বাড়ি আছে। লোকে ওটাকে ডাইনি মহল বলে। তুই ওদিকেই যাচ্ছিলি।"
"তারপর কি হল?"
"তারপর তোকে তো আর খুঁজে পাইনি, অন্ধকার হয়ে আসছিল বলে আর খুঁজতেও পারিনি। আজ সকালে এসে শুনলাম তুই নাকি বাড়ির সামনেটায় অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলি। কি হয়েছিল তোর?"
"আমার তো কিছুই মনে নেই"
"ওদিকে কোথায় যাচ্ছিলি?"
"সেটাও মনে নেই রে।"
"আমিই ঠিক বুঝেছি তবে।"
"কি বুঝেছিস?"
"ওই ডাকিনি মহলের কেউ তোকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল।"
"ধ্যাত্ ওসব আবার কিছু হয় নাকি? যত সব আজগুবি।"
"এই তোর দোষ, কিছুই মানিস না।, বেশ তো চল আবার। আজকেই সব প্রমাণ হয়ে যাবে।"
"নাহ আমি যেতে পারব না। "
"কেন??"
"এমনি শরীর ভালো নেই। তুই যা।"
তিয়াস চলে গেলে সমস্ত ঘটনারা নীলের মাথায় ভিড় করলো। কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ্যে কিছুই বুঝতে পারছিল না।
এরপর দু মাস সময় চলে গিয়েছে, নিশা আসেনি। নীল এখন সারাদিন নিজের ঘরে পড়ে থাকে। ক্ষণে ক্ষণে বাগানের দিকে ছুটে যায়। ও জানে নিশা আসবেই। বাড়ির কেউ খুব একটা ওর কাছে আসে না। কেউ কেউ আড়ালে বলে ওর নাকি মাথার গন্ডগোল। কেউ ঘরে এলেই নীল জিজ্ঞেস করে নিশার কথা আর নাহলে ডাকিনি মহলের কথা।
.
আজ আবার বাগানের থেকে সেই পরিচিত নূপুরের শব্দ ভেসে এলো। নীল ছুটে গেল সেদিকে।
পরদিন সকালে নীলকে আর কোথাও কেউ খুঁজে পেল না।




কাব্যিকা দাশগুপ্ত

No comments:

Post a Comment