এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

সবর্না চট্টোপাধ্যায়





কবিতা



বন্ধু

ঝড়ের মত ওরা মাঝেমাঝে উড়ে আসে খোলা ছাদে। কেউবা নৈর্ঋত- ঈষান কোণে জ্বলজ্বল করে সাইরাস দ্বীপের মত।
কি ঝকঝকে হাসির ফোয়ারা ছড়িয়ে স্মৃতির বুদবুদে ভেসে আসে একএকটা নাম...
         সব যোগাযোগের বাইরেও একটা চৌরাস্তা আছে বুকের ছইঞ্চি ভেতর। নাকবরাবর, শিউলি ঝরা সকালে পুকুরঘাটে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে পায়রাদের দানা খাওয়ায় রোজ….
                পলিথিন ব্যাগের মত চারটে ছেলে তখন গড়িয়ে গড়িয়ে লুকোচুরি খেলছে। কতবার জানলা থেকে ওদের ছড়া শুনিয়ে দিই।
          
মাটির পুতুলবাটিগুলো ঠিক ছত্রাকার হয় আমার ভোররাতে। কচিমেয়েটা সযত্নে গুছিয়ে রাখে লুচিপাতা আর স্টোনচিপসের বড়া।

      খানিকটা জ্যোৎস্না মেঝেতে মাদুর পেতে গানের লড়াই খেলে। সেই অবসরেই আমি দেখি,ইস্ত্রিপাট বন্ধুরা থরেথরে টাঙানো দেওয়াল আলমারিতে।
ধুলো ঝাড়তেই অটোমেটিক্যালি শুরু হয়  ‘শচীনসৌরভ’এর কখনও না শেষ হওয়া বিতর্ক সভা।  লাস্টবেঞ্চের মেয়েটা তখন সারাগায়ে শ্যাওলা মেখে ওর নামের নীচে কম্পাস দিয়ে লিখে রাখছে আমার নাম।
                          আমি পাশ ফিরে শুই।
দুটো লম্বা বেণী ওপাশে মুখস্থ করেই চলেছে সিন্ধুসভ্যতার ইতিহাস। স্ফিংক্স এর মত আমিও তাকিয়ে পিরামিডের চূড়োয়…
চারদিক থেকে হঠাৎ দৌড়ে আসে কলেজপালানো চড়ুই এর ঝাঁক। মৌমাছির চাক থেকে মধু চুষতে চুষতে একটা ভাঙাচোরা সিনেমাহলে ঐশ্বর্য’র ‘চোখেরবালি’ দেখে।
        
ক্যান্টিনের ঠান্ডা চায়ে গিটারের সুর মিশিয়ে আমার নানাফোড়নে এসেফাই ঝান্ডা ওড়ায় রোজ। পঁয়ত্রিশ বছর ধরে ওরা একটানা ঝরে পড়ে গরম ফ্যানের সাথে।
              

লুডোরঘুঁটির মত ওরা ছড়িয়ে আমার চৌকো শরীর জুড়ে।সমস্ত অবসর খুঁড়ে মুখস্থ করে ‘স্বাধীনতার ইতিহাস’। জীবনের ঘ্যানঘ্যানে বিছানায় আচমকা শিলাবৃষ্টি শুরু হয় ......






ঠাকুমাদিদিমাদের গল্পগুলো

বৌদ্ধ মন্দিরের ঘন্টার মতই আমাদের ঠাকুমাদিদিমার গল্পগুলো।
আলোফোটা ভোরের হাপিত্যশী বক...
           সেই কোন কাকভোরে নদীর ধার ধরে চলতে চলতে মাঝ সাগরে পৌঁছেই চারদিক অন্ধকার ।
              অথচ কি সহজেই একদিন ভরা জোয়ারে মাছ ধরতেন ডুবসাঁতারে।

              খটখটে রোদে পোড়া গামছার মত ইষ্টনামে মশগুল হয়ে রোজ বিকেলপাঁচটায় টিভি সিরিয়াল চিবুতে থাকেন। রুদ্রাক্ষমালা গলায় ঝুলিয়ে বিয়ের সাদাকালো অ্যালবামে চোখের পিন ফোটান। বুক চাপড়ে অনর্গল বলে চলেন,'আমাদের সময়ে' এর অলৌকিক উপন্যাস।
        দুপুরে লাউপাতার বড়া আর কচুবাটা মুখে দিয়ে লাফিয়ে উঠে পায়েস বানান ছেলের জন্য। রূপোর চামচে মুখে তুলে দেন শেষপাতে।
রোদে পোড়া নাতিপুতিছেলেকে সযত্নে আখেরগুড় আর জল দেন মিঠে আঁচলায় বাতাস বেঁধে।
কুমড়োশাকের মত লতলতিয়ে ছুঁয়ে যান গঙ্গারজল। রেখে দেন চুপিসারে। সিংহাসনের পাশেই...
আবার মাঝেমাঝেই, ধুনোর ধোঁয়ায় দম আটকে ছুটে যান হাসপাতালের বেডে। একপাতা ওষুধের মত শরীরে, চ্যানেল-অক্সিজেন নল, শেষে স্যালাইন ওয়াটারও...
তবুও বাড়ি ফিরে চুপিচুপি পুচকেটার সাথে স্প্রাইটের বোতল খোলেন বাঁধানো দাঁত পরে।
                ঘন্টার মত একটানা বাজতে বাজতে সারাগায়ে হঠাৎ যন্ত্রণা শুরু হয়।গলায় সেপটিপিন ফুটিয়ে এতবছর এসব নদী শুধু বয়ে বেড়ায় একটা গোটা বংশতালিকা তলপেটে পুড়ে।মাসিক যন্ত্রণার মত কেটে যায় গোটা জীবন। বাড়ির এই বিবধা গাছটি বরফের দেশে জন্ম নেওয়ার আগে গভীর স্বপ্নে একবার ঠিক ফিরে যান তার মা'বাবার ভিটে বাড়ির চালে....
                    তার হাতে তখন আস্তএকটা ঝুড়ি আর সামনে এক-মাচা ঝিঙেফুল।


সবর্না চট্টোপাধ্যায়

Sabarna Chatterjee has completed higher studies in Computer Technology. She opted to stay away from the corporate rat-race and instead engages in literary and creative pursuits. Her writings have been published in various printed and web magazines.Her First Book in poetry is “Chardewali Chupkathara” from Signet Press in 2018.

No comments:

Post a Comment