এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

শ্যামাপদ মালাকার




কবিতা




বিশ্বাসঘাতক

ধর,--আমার বুকের ভিতর একটা তামাটে বর্ণ কৃষক নাঙল চালাচ্ছে,- -
আচ্ছা, ওটা বাদ দাও,
মনে করো- আমার সব অন্তরটাই পল্লীর মাঠ হয়ে চাষের গাজন চলছে।
কেউ লক্ষ্য করেনি, আকাশের গায়ে একটুকরো মেঘ- - ধীরে - ধীরে - সব আকাশটা ছেয়ে ফেলল।

আগাম দু'একফোঁটা, পরে দু'দশ ফোঁটার সাঙ্গে- - নেমে এল প্রবল বর্ষণ!
তুমিও হতবাক! আমিও!
হঠাৎ মাঠ অন্ধকার করা দারুণ একটা বজ্রপাতের শব্দে, তুমি আমায় আঁকড়ে ধরলে!
পলকে পলকে বর্ষণ- -
সারামাঠ ধরে- ধর ধর কোদাল ধর, লাজ ভেঙ্গে পাগ বেঁধে জল ধরে রাখ রব।
একদিকে আনীত শাকসেদ্ধ পান্তার উপর বৃষ্টির প্লাবন- -
অন্যদিকে হাঁকে ডাকে শব্দের অন্ধকারের এক কোণে,-মন্দবিদ্যুতের ন্যায় ধ্বনিত হতে লাগল- ধর ধর কোদাল ধর!

কেউ লক্ষ্য করিনি-
সমুদ্রউত্তাল তরঙ্গের ন্যায় বর্ষিত বৃষ্টির লহর, সারামাঠ প্রহত করে চলেছে- -মনে হচ্ছে এই বুঝি শেষ দিন!।

আমি যে কাঁপছি, তুমি টের পাচ্ছ,- -
আমিও টের পাচ্ছি!
আমার ললাট-চিবুক তোমার বুক বিদীর্ণ করে- হৃৎপিণ্ডের শিকড়ে শিকড়ে মাটির মতো ঠোঁটের গন্ধ লেপে দিতে চাইছি! সহসা সেখানেও কি একটা প্রবল ঝিঁকুনি দিয়ে বলে উঠবে,-"এ হতে পারে না,- -এ অন্যায় - অন্যায় -অন্যায়, তুমি বিশ্বাসঘাতক!"।

তখনও আমার বুকের ভিতর- কাদমাটি মাখা সেই কৃষকটা বলে চলেছে,-"লাজ ভেঙ্গে পাগ বেঁধে- ধর ধর কোদাল ধর,- -নিজের ফসল ঘরে তোল, ওরে নিজের ফসল ঘরে তো- - - - -!"।।





সংলাপ

রুপ তো নির্গুণের আধার
মরে শুধু তৃপ্তির লালসায়-
আদর্শ প্রেম কি তারে বলে কবি?

যদি তাই হয়,-ফুলের মধু বুকে
নারীর মধু অন্তরে- -
তবু মজে মরে কেন সব রুপে!

"-একি প্রশ্ন রাখলে বন্ধু অতিথির
ভগে- দিয়ে ডুব সীমাহীন স্নেহের তরঙ্গে- আজ এখানেই সমাপ্ত করে যাও,-
সন্ধ্যা নামল যে প্রদীপটা ধরায়ে দাও!"।

প্রশ্নের কি নিষ্পত্তি ঠিক হল কবি!- -
পৃথিবীর বুকে দাগ রেখে যেত চাই না,
মনে রাখো যদি কবি হয়ে,-একদিন
মুখোমুখি বসবো 'বনলতা' সেজে বাংলার বুকে!
সেদিন বড় বড় কবিরা তুলবে কত ঝড়-
ঐ দুয়ারে, তবু ঐ মরণে কি সুখ!।

সেই সুখ প্রিয় আমি বিনা
কেউ যেন না আর জানে!।

শ্যামাপদ মালাকার

No comments:

Post a Comment