এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

আর্যতীর্থ






কবিতা




শব্দসন্ধান১

সকাল থেকে কিছু শব্দ খুঁজছি আতিপাতি করে,
কিছু কথা, যাদের জমাট বুনোটে এমন কবিতা  হবে,
যা পড়েই  সব্বাই বলে উঠবে, দেখেছো, এটা একদম আমার কথা!
কোথায় পাবো তাদের? প্রেম বললো, আমার দিকে তাকিওনা,
সবার মনে প্রেম আসেনা আর তেমন করে।
সুখ বললো, আমায় নিয়ে লিখতে পারো বটে,
কিন্তু ওই দুঃখটা এসে ঠিক বাগড়া দেবে।
মানে মানে আগে বাড়ো, জেনে রাখো সুখ সয়না সবার মনে।
ধর্ম পাশ থেকে ধমক দিয়ে বললো, লেখো দেখি দুকলম আমাকে নিয়ে!
আমি বললাম রক্ষা করো, অভ্যেস নেই ঘি ঢালার বিষ আগুনে।
এমনি করে আমার শব্দসন্ধান বিষয় থেকে বিষয় ঘুরতে থাকলো,
মাথা ঠুকতে থাকলো  এ দেওয়ালে ও দেওয়ালে।
অবশেষে এক চিলতে ঘরের দরজা খুলে দেখি,
সেখানে আশা বসে আছে।
ওর কাছে শব্দ চাইতেই হেসে উঠে বললো, আশা রাখো, আশার কবিতা ঠিক হবে আগামীতে!'
তখন থেকে আমি আশার জন্য শব্দ খুঁজছি,খুঁজেই চলেছি।



দেরাজ

সে বলেছিলো, আর কিছু না, শুধু আমার দেরাজ হবে।
দরকারী সব কথা নানান তাকে গুছিয়ে রেখে দেবে,
আর গোপন কথাদের জন্য হবে চাবি দেওয়া লকার,
এরকমই সে বলেছিলো হাবেভাবে একপ্রকার।
আমি জন্ম-অগোছালো, তখন অবধি  সব ছিলো এলোমেলো
গুছিয়ে দেওয়ার সে প্রস্তাবে প্রাণে  যেন বাতাস ঢুকে এলো!
ধীরে ধীরে দেখলাম, আমার বুকের সব স্মৃতি, সব আশা ও আকাঙ্খারা
বর্ণানুক্রমিক ভাবে গুরুত্বানুসারে সমস্ত গুছোনো রয়েছে তারা,
জীবন সুনিয়ন্ত্রিত,  তেল দেওয়া মেশিনের মতো।
এলোমেলো চিন্তার বেকার ঝঞ্ঝাট যত,
সবকিছু হয়ে গেছে ঝেঁটিয়ে বিদায়, সাধের গিটার আর কবিতার বই,
শৃঙ্খলা ফিরে পেতে আমিও নিয়েছি মেনে সেটা,বিনা হইচই।
মাঝে মাঝে ছটফট করি, এর চেয়ে এলোমেলো ভালো কিনা ভাবি,
শেকল বাজাই শুধু, দেরাজ হয়েছে যে, তারই কাছে দেরাজের চাবি.....



বাকি গল্পটা

আজ তবে এইটুকু থাক, বাকিটুকু বলে দেবো আবার নিভৃত কোনো গোধুলিসময়ে,
আজকে ফিরতে হবে। কিছু কথা বাকি থাক, মোড়ক খুলতে তার হবে রয়েসয়ে।
তদুপরি,  আমি তো খোলসা করে বলেছি তোমাকে,
কিভাবে ইচ্ছেপাখি তোমার ছোঁয়াতে ডানা ঝাপটাতে থাকে,
কি ভাবে স্বপ্নঘুড়ি আসমানে গিয়ে ভাবে কবে তুমি গুটাবে লাটাই,
আজকে সময় পেয়ে সন্ধে সাক্ষী রেখে তোমাকে বলেছি পুরোটাই।
অবশ্য স্থানে স্থানে কিঞ্চিৎ চেপে গেছি কিছু ছুপকথা,
গল্প নিটোল রাখা ভালো;
কিছু বলে দেওয়া কথা আগামীতে হতে পারে দারুণ ধারালো,
সুতরাং, সাধু সাবধান। প্রেমে ও সমরে নাকি নিয়ম কানুনে থাকে কমবেশী ফাঁক,
আজ তাই স্বপ্নের নিদাগ কাহিনী বুনি, হোঁচটের গর্তরা রাখা ঢাকা থাক।
যদি আশু আগামীতে জীবনের সুতোগুলো জমাট গল্প বোনে আমাদের কোনো,
তখন বলবো এসে, কাহিনী হয়নি শেষ, এইবার পাশে বসে বাকিটুকু শোনো....



ফোন

রুটিন গিলে ঘন্টা মিনিট আকণ্ঠ,
ক্ষান্ত দিলো শেষবিকেলের রোদ্দুরে।
ক্লান্তি, এমন ক্লান্তি তখন মন জুড়ে,
গতর তোলা বাধ্য হলেই একান্ত।

এমন সময় হঠাৎ করে ফোন তোমার
নদীর পাড়ে সূর্য ডুবছে, দেখতে যাবে?
গরমিল হয় এক মিনিটে সব হিসাবে
ঝিমিয়ে পড়া মনের ভেতর ধুন্দুমার!

এমন কথায় না বলা কি চলতে পারে?
সন্ধ্যাকালে  নামিয়ে রেখে কাজের বোঝা
তোমার সাথে হাত মিলিয়ে সূর্য খোঁজা
সরিয়ে রেখে ফোকলা সময় অদরকারের।

যে যাই বলুক, সূর্য দেখা  জরুরী নয়,
লোভ রয়েছে তোমার সাথে সময়ভাগে,
আলগোছে যেই চুল সরালে অস্তরাগে
হৃৎপিন্ডে ওলটপালট,  কি হয় কি হয়!

রূপকথারা লুকিয়ে থাকে মনের কোণে
নদীর পাড়ের সূর্য দেখার অজুহাতে,
পক্ষীরাজে ঘুরে এলাম তোমার সাথে
অপেক্ষাতে থাকি এমন একটা ফোনের।



আর্যতীর্থ

No comments:

Post a Comment