এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

মধুশ্রী ভট্টাচার্য্য




উপকথা
(আফ্রিকার উপকথা)





সত্যবাদী মামাদ

মামাদ নামে এক জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। তিনি কখনো মিথ্যে কথা বলতেননা। এজন্য মামাদের নাম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। শেষে দেশের রাজাও একদিন মামাদের নাম শুনতে পেলেন। মামাদ কখনও মিথ্যে বলেননা একথা রাজার ঠিক বিশ্বাস হলনা। মিথ্যে কথা না বলে আবার বেঁচে থাকা যায় নাকি? বাঁচতে গেলে সবসময় সত্যি বললে চলেনা। যাইহোক ব্যাপারটা ভাল করে বোঝার জন্যে রাজা একদিন মামাদকে রাজসভায় ডেকে পাঠালেন। মামাদ সভায় উপস্থিত হলে রাজা জিজ্ঞেস করলেন
"মামাদ, শুনেছি আপনি সারা জীবনে একবারের জন্যও মিথ্যে কথা বলেননি। একথা কি সত্যি?"
"হ্যাঁ, মহারাজ। একথা সত্যি। আমি জীবনে একটিও মিথ্যে কথা বলিনি।"
"কিন্তু সবসময় সত্যি কথা বলা কি সম্ভব? অনেক সময় ইচ্ছা না থাকলেও মিথ্যা বলতে হয়। কিংবা সত্যি কথা কখন মিথ্যে হয়ে যায় বোঝা যায়না।  "
মামাদ একটু চিন্তা করে বললেন
"পরিস্থিতি যেরকমই হোক না কেন সত্যজ্ঞান থাকলে মিথ্যে কথা বলা এড়ানো যায়।"
"আমি সেটা মনে করিনা। আপনি তাহলে মিথ্যে কথা বলবেন না কখনও?"
"না মহারাজ। আমি মিথ্যাচার করবনা।"
"বেশ সত্যি কথাই বলুন তাহলে। তবে সাবধান। মিথ্যা কিন্তু খুব ধূর্ত জিনিস।" বলে সেদিনের মত রাজা মামাদকে বিদায় জানালেন।
রাজা আসলে বেশ রেগে গিয়েছিলেন মামাদের কথা শুনে। এতদিন দেশ চালাতে গিয়ে রাজা বারবার দেখেছেন যে সবসময় সত্যি কথা বলা যায়না। সত্যের থেকে মিথ্যে অনেক বেশি কাজে দেয়। আর সেই জায়গায় মামাদ বলেন কিনা তিনি কোনদিন মিথ্যে বলেননি? তাঁর এই কথাটাই রাজার ডাহা মিথ্যে বলে মনে হল। রাজা ভাবলেন হয় মামাদ একজন ভণ্ড নাহলে একজন বোকা। একজন বিচক্ষণ মানুষ সবসময় সত্যি কথা বলার মত বোকামি করতে পারেনইনা। এইসব ভেবে পরীক্ষা করার জন্যে এক ফন্দি এঁটে একদিন তিনি মামাদকে ডেকে পাঠালেন। মামাদ প্রাসাদে পৌছে দেখেন লোকলস্কর নিয়ে রাজা তখুনি শিকার করতে বেরুবেন। সব প্রস্তুতি শেষ, এবার ঘোড়ার পিঠে চড়বেন বলে সবেমাত্র বাঁ পা খানা পাদানিতে রেখেছেন। রাজা বললেন
"মামাদ, একটা দরকারে আপনাকে ডেকেছি। আপনি আমার গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদে গিয়ে মহারানীকে বলুন আয়োজন করতে। আমি আজ দুপুরে ওখানেই খাব। আর হ্যাঁ আপনিও কিন্তু আজ আমাদের সাথেই খাওয়াদাওয়া করবেন।"
"যথা আজ্ঞা মহারাজ। আমি এখুনি মহারানীকে গিয়ে খবর দিচ্ছি।"
এই বলে মামাদ রানীকে খবর দিতে গেলেন। মামাদ চলে গেলে রাজা খুব এক চোট হেসে নিলেন। মনে মনে ভাবলেন এইবারে দেখা যাক কিকরে সত্যি কথা বলে বোকা লোকটা। এই ভেবে সঙ্গিসাথিদের বললেন
"আমরা আজ আর শিকারে যাবনা। দুপুরে গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদেও যাবনা। মামাদ , রানীকে বরং মিথ্যে খবর দিন গিয়ে যান।"
ওদিকে মামাদ মহারানীর কাছে গিয়ে অভিবাদন করে বললেন
"আজ দুপুরে মহারাজ এখানে খেতে আসলেও আসতে পারেন আবার নাও আসতে পারেন। মনে হচ্ছে আগামীকাল একটা ভোজের আয়োজন করা আপনার উচিৎ হলেও হতে পারে আবার না হলেও হতে পারে।"
মামাদের কথা শুনে রানীর সব গুলিয়ে গেল।
"আপনি কি বলছেন আমি বুঝতে পারলাম না? মহারাজ কি আজ দুপুরে আসবেন?"
মামাদ তখন নিজের চোখে যা দেখেছিলেন তাই বললেন
"আমি মনে হচ্ছে দেখেছিলাম যে মহারাজ ঘোড়ায় চড়ার জন্যে বোধহয় নিজের বাঁ পা খানা পাদানিতে রেখেছিলেন। আমি চলে আসার পর বাঁ পা খানা পাদানি থেকে নামিয়ে মাটিতে রেখেছেন কিনা তাতো জানিনা। কি করে বলব আজ মহারাজ আসবেন কিনা?"
মামাদের কথা শুনে রানী ভাবলেন রাজা সেদিন  দুপুরে খেতে আসলে আসতেও পারেন। তাই সারাদিন তিনি রাজার জন্যে অপেক্ষা করলেন। কিন্তু সেদিন রাজা এলেন না। পরদিন রাজা এসে রানীকে জিজ্ঞেস করলেন
'সত্যবাদী মামাদ গতকাল তোমায় মিথ্যে খবর দিয়েছিল। তাইতো? সবসময় সত্যি কথা বলা সম্ভব নয়।"
রানী বললেন
"না মামাদ কাল আমাকে ঠিক খবরই দিয়েছিলেন।"
তারপর মামাদের বিচক্ষণতার কথা রাজাকে বললেন। তখন রাজা বুঝতে পারলেন প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তি কখনও মিথ্যে কথা বলেননা। নিজের চোখে যা দেখেন সেটুকুই বলেন তার বেশিও না, কমও না।




*****

No comments:

Post a Comment