এখন তরঙ্গ তে লেখা পাঠান প্রতিমাসের ৫ থেকে ২০ তারিখ অবধি

মানবেন্দ্র ব‍্যানার্জী




লিমেরিক
(লিমেরিক সমগ্র)




ছুটোছুটি
              
পড়লে ছুটি যাবো উটি এমন ছিলো কথা ।
সাগর-পাহাড় জড়াজড়ি দেখবো গিয়ে সেথা।
দিস্তা খানেক হাতের ছুটি
কাজের তাড়ায় হুটো পুটি
পেরিয়ে গেল এক লহমায় দিয়ে মনে ব্যথা।
                
ছিলো খানিক বাড়ির পড়া, ছিলো আঁকার কাজ।
কখন যে হায়!সকাল এলো ---কখন এলো সাঁঝ।
গেলাম ক'দিন মামাবাড়ি
ছুটলো সময় তাড়াতাড়ি
অংক খাতা রইলো সাদা পড়লো মাথায় বাজ!
               
হপ্তা খানেক হাতে আছে ----কিন্তু সে তো নস্যি‌।
কখন যে তা ফুরিয়ে যাবে ,বলো তো তার দোষ কি?
দাঁড়িয়ে আছে দু'টো মেলা
যায় না করা হেলা ফেলা
পায়ের চাকা ছুটছে জোরে----- সময় ভারি দস্যি !




শশিখুড়োর সুগার

শশিখুড়োর সুগার বলে শশা আসে বস্তাতে।
উচ্ছে খাচ্ছে ইচ্ছে মত নিম পাতা খায় সস্তাতে।
ভাতের বেলায় একটি বাটি
রাতে বাঁধা দুটি রুটি
মিষ্টি খেলে গুষ্টি সহ হবে তাদের পস্তাতে ।




কেরল কূলে দাঁড়িয়ে আছো মাথায় নিয়ে মেঘ।
থমকে আছো চমকে গেছো হারিয়ে গতিবেগ।

             বিয়ের জন‍্য যা প্রয়োজন
             সারা হোল সব আয়োজন

টোপর মাথায় পুকুর ঘাটে দাঁড়িয়ে আছে ভেক !



স্মৃতি--১

ফেলে এলাম হেমন্তের দিন ধান কাটা মাঠে।
স্মৃতি গুলো হিমেল হাওয়া দিন রাত্রি চাটে।
অবহেলার কলমি লতা
আঁকা আছে ছেঁড়া খাতায়
ঘুমে ভাসে গোরুর গাড়ি বিলাসিতার খাটে!



স্মৃতি---২

গোধূলিতে ধূলো ওড়ায় হেমন্তের বিকেল।
দিগন্তে কে ছড়িয়ে দেয় ধোঁয়াশার নিকেল।
খেজুর গাছের কামিয়ে দাঁড়ি
শিউলি ঝুলোয় রসের হাঁড়ি
শিউরে উঠি বাতাস যখন শিরশিরে হিমেল।


বুক চিতিয়ে শুয়ে আছি আমি চলার পথ।
যুগে যুগে ও জগন্নাথ চালাও তোমার রথ।
তুমি জানি অন্তর্যামী
রথ‌ও ঘামে আমি ঘামি
আমার বুকে রথের চাকার শুকোয় না হায় ক্ষত!


পোষের শেষে

পোষের শেষে বাড়লো এসে শীতের বেদম জাঁক।
হিমালয়ের  হিমেল হাওয়া  নিচ্ছে দারুণ বাঁক।।

পড়ছে শিশির ঝির ঝিরিয়ে---
উঠছে শরীর শির শিরিয়ে ---

চোরা বাতাস ছোরা নিয়ে খুঁজছে লেপের ফাঁক।


ঋণ

ছোট দিনের দু'দিন পরেই আসে বড়দিন।
দিনে দিনে বাড়ে সবার যিশুর কাছে ঋন।
মেরির কোলে শিশু হাসে
জগৎ মাঝে আলো ভাসে
সময় বেয়ে মনুষ‍্যত্ব হতে থাকে ক্ষীণ!


পাহাড়

দাঁড়িয়ে আছো যুগ যুগান্ত ধ‍্যানে থেকে মগ্ন।
ঝঞ্ঝা ঝড়ে যদিও শরীর হতে থাকে রুগ্ন ।
করেছো তুমি ত্রিকাল দর্শণ
দেখেছো কতো অশ্রু বর্ষণ
মানুষের আজ নিষ্ঠুরতায় অন্তর তোমার ভগ্ন!


মশক পাহাড়

মশক একটি সুন্দর পাহাড় চূড়োয় আছে গুহা।
এখানেতে আদিম মানুষ বলতো কথা হু হা।
গুহার শেষে জলাশয়
গল্প কথায় লোকে কয়
বৌদ্ধযুগে এই পাহাড়ে হতো লেখা দোহা।


মাঘের শেষে মুচকি হেসে উঁকি দিলো ফাগুন।
সময় হলে ফুলের বনে জ্বলবে আবার আগুন।
               মৌমাছিরা গুনগুনিয়ে
                  খাবে মধু বনে বনে
শীত ঘুমেতে আছেন কেন?জাগুন এবার জাগুন!



গাছ

গ‍্যালন গ‍্যালন গরল পানে হয়ে গেছ নীল
মুক্ত করো সারা বিশ্বের যা কিছু সব মলিন।
সহ‍্য করো শত আঘাত
তোমার জন‍্য‌ই অমল প্রভাত
ত‍্যাগ, তিতিক্ষা,সহনশীলতা তোমার দেহে লীন।



ফাল্গুনে বিকশিত

শিমূল ডালে ফাগুন লাগে বাতাস উড়ে সুখে।
কোকিল এলো কণ্ঠ সেধে মিষ্টি কুহু মুখে।
হাওয়ায় হাওয়ায় ভাসে ফাগুন
পলাশ গাছেও লাগলো আগুন
'ব‌উ কথা ক‌ও' সুর উঠেছে আইবুড়োদের বুকে।



ঋতু বদল

গ্রীষ্মকালে বাতাস খেয়ো বসে গাড়ির হুডে।
শীতের সন্ধ্যায় কফির কাপে চাঙ্গা করো মুডে।
ঋতুর পায়ে ঘুরছে চাকা
ঋতুর গায়ে হচ্ছে লেখা--
কাব‍্য ছড়া গল্প নাটক ডে--- টু ডে ।



ঘরে ঘরে

গিন্নি বসেন সিরিয়ালে ছেলেই খেলছে  গেম।
সময় খাচ্ছে সন্ধ্যা বেলার নেই কো খাওয়ার নেম।
আমি বসে ফেসবুকে
কারো কথা নেই মুখে
ঘটনাটা  আমার‌ই নয় ----ঘরে ঘরেই সেম।



বৃষ্টি

ধীরে ধীরে রান তুলছো যে ঠুকুর ঠুকুর ব‍্যাট চালাও?
দুটো একটা রান কুড়িয়ে দর্শক কুলকে খুব জ্বালাও!
                  স্লগ ওভারে দম্ দমা দম্---
                  ঝেড়ে যাবে ঝম্ ঝমা ঝম্---
পাড়্ ধ্বসিয়ে লোক কাঁদিয়ে বছর বছর দেশ ভাসাও !



হোক একটু লিমেরিক

   রিমিঝিমি রিমিঝিমি ঝম্ ঝমা ঝম্ ঝম্।
অঝোর ধারায় ঝরলো শ্রাবণ কত মনোরম।
               একটা দুটো আন্তরিক
            লিখনো না কেউ লিমেরিক
 লিমেরিকের কল কব্জায় একটু দিন না দম্ ।




শিমূল-পলাশ

শিমূল ফুটলো লালে লালে ফুটেছে পলাশ।
পাগল হয়ে উঠলো ফুটে মিটিয়ে মনের আশ।
রঙ ছড়ানো আবীর আকাশ
চারি পাশেই জবা সঙ্কাশ
পথের পাশেই পড়ে আছে পাগলী মেয়ের লাশ!



ফাঁকা আসর

মাথাটা আজ গড়ের মাঠের বোতামখোলা হাওয়া।
ইচ্ছে হলেই সন্ধ্যা বেলায় চলবে ঢালাও খাওয়া।
আসছে না আজ লেখাজোখা
লাগছে যে খুব‌ ফাঁকা ফাঁকা
আসর পেতে বসে আছি--- হচ্ছে না গান গাওয়া।



ভাইফোঁটা

ভাই দাদাদের মক্ মকামি হবে ভুরিভোজ।
মিষ্টি মাংস ঢুকিয়ে পেটে হবে ওভারডোজ।
কপালে যেই পড়বে ফোঁটা
চম্পট দেবে সূর্যের বেটা
যমুনা কাল সকাল থেকে করুক যমের খোঁজ।



ভরা শ্রাবণ

শ্রাবণী মেঘ  গুমরে ওঠে ফুঁসছে গুমোট রাগে--
বৃষ্টি কি আর? জল পুলিশে যেমন কামান দাগে!
মেঘ চড়কা লাঠি চার্জ
বড়বাবু ছুড়েন বাজ
এমন দিনে যায় কি বলা ?গভীর অনু-রাগে!



প্রতীক্ষা

মেঘের খামে ভেজা চিঠি পাবো কবে বলনা?
শুনছো ওগো বিদেশিনী দূর সাগরের ললনা?

তপ্ত দুপুর হৃদয় পেতে
চেয়ে থাকি বিমান পথে

ভিজতে চাইছি বলে কেন করছো এমন ছলনা!




মর্ত‍্যে বাড়ে অসুর

মহিষাসুর বধ হয়েছে বধ হলো তার শ্বশুর
দুর্গাদেবী দশ হাত দিয়ে স্বর্গে তাড়ান অসুর
হাতে নিয়ে তরবারি
অসুর তাড়ান তারকারি
মর্ত‍্যে শুধু বংশ বাড়ে অসুর জাত পশুর!


ধর্না

ইন্দ্ররাজের খাস তালুকে বরুণ দেবের দপ্তরে।
দপ্তরিটা পড়লো প‍্যাঁচে পাঁচশো ব‍্যাঙের খপ্পরে।
একশো দিনের বৃষ্টি চেয়ে
ঘ‍্যাঙর ঘ‍্যাঙর উঠলো গেয়ে
বরুণ বাবু হেসে বলেন দাবী যে খুব শক্তরে !



মেজো পণ্ডিত

নামো পাড়ার মেজো পণ্ডিত বসে থাকেন টুলে।
তাঁর কথাটি বলছি আজকে বেত ভাঙা পিঠ ভুলে।
একশো শিশু ভোর বেলাতে
পড়ে নীচে চাটাই পেতে
একা মানুষ ঝিমোন শুধু চোখ দু'টি যায় ঢুলে।



বড়দিন

বড়দিনে মজা উড়ে বাজে মনে বাঁশি।
জগৎ মাঝে যীশু এলে মায়ের মুখে হাসি।
ছোট্ট শহর বেথেল হেমে
প্রেমের ঈশ্বর এলেন নেমে
খুশি হয়ে কেক কেটেছেন সান্তাক্লজের মাসি।



নিঃস্ব আমি

জন্মভূমির মুক্তি মন্ত্রে দীক্ষা নিলেন যে সব নাম।
ব্রিটিশ যন্ত্রে ফাঁসির মঞ্চে শহীদ প্রথম ক্ষুদিরাম।
দেশের জন‍্য তুচ্ছ জীবন
মরনকে যে করল আপন
এগারো আজ আমার কাছে;নিঃস্ব আমি কী দি দাম!!



শূন‍্যপদ

স্বর্গে  কিছু নিয়োগ হবে খালি আছে পোস্ট।
লাইন দিলো লক্ষ্যাতড়ায় যত ছিল ঘোস্ট।
টাকা দেওয়ার পড়ে লাইন
হোক না যত রেজাল্ট ফাইন
ইন্দ্ররাজা সিংহাসনে খাচ্ছে বসে টোস্ট!



আগমনি

ময়ূরপঙ্খী মেঘেরা সব আনবে বঙ্গে বর্ষা।
গুমোট গরম মাঝে বসেও পাচ্ছি মনে ভরসা।

সাগর বুকের মৌসুমী
তপ্ত দুপুর যাও চুমি

তোমার ছোঁয়ায় ভাসুক এবার কাঁসাই থেকে তোর্সা।



তোমার দেখা নাই

গরম কালের দাপট দেখে ঘুরে গেছে দৃষ্টি।
আকূল হয়ে চাইছে সবাই একটু খানি বৃষ্টি।

পশলার পরে পশলা এসে
ভিজিয়ে দিলে অবশেষে

বলবে সবাই ছাড়বে কখন এ যে অনাসৃষ্টি।



সাপুড়ের বাঁশি

সাপে নাকি শুনতে পায় না ঝাপসা দেখে চোখে।
মানুষ কেন দেখছে আঁধার প্রকাশ‍্য আলোকে ?

মাদলি তাবিজ বুজরুকি--
ভণ্ড কে যে বুঝছে কি!

সাপুড়েদের বাঁশি শুনে দেখো কেমন ঝোঁকে!



ধৈর্য্য

অস্থিরতা ফেলো ছুঁড়ে মনে এনো ধৈর্য্য।
স্থিতধী যে আপন গুনে ছড়ায় মনের শৌর্য।
সব কিছুতেই নাইবা রাগলে
স্থিরতাকে রেখো আগলে
সাফল‍্যটা আসবে ধেয়ে ---এটা অনিবার্য!




তোপ

   বাঘ মামাকে ধমকে বলে তার‌ই প্রিয় বাঘিনী।
  উড়ে বেড়াও ঘুরে বেড়াও কখনো তো রাগি নি।
                ছানা পোনা নিয়ে ঘুরো
                যেথায় খুশি গিয়ে মরো
ন‌ইলে এবার দাগবো যে তোপ্ যেটা কোথাও দাগি নি!


আন্তসার শূন‍্য
চার পাশেতে চলছে দেখি বাছা-বাছির ধুয়া।
ধান বাছাতে আগড়া বেরোয় ডাক্তারেতে ভূয়া।
         ঠগ বাছাতে উজাড় গ্রাম
                 চিট ফান্ডেতে ভরা খাম
   গণ্ডার গায়ে হাত বুলোতেই হয়ে গেলো চূহা।



গাছ

পাঁচ‌ই জুন কানেকানে বললো একটি গাছ
গরম কেমন লাগছে বন্ধু পাচ্ছ নাকি আঁচ?

ভাই ভায়াদে কুঠার হাতে
খুন করে যাও দিনেরাতে

বাঁচতে গেলে দিলাম বলে আমিই হাতের পাঁচ!



শীতে মেলে ডানা

শীতের হাওয়ার লাগলো ছোঁওয়া মেলছে মনে ডানা
খুশির ট‍্যুরে   যাচ্ছে উড়ে----নেইকো উড়তে  মানা!
বাড়ছে পথে  গাড়ি-ঘোড়া
হাতের রেখায়  উঠছে ফাঁড়া
তবুও মানুষ  চায়না হতে রাম-গরুড়ের  ছানা।



ডেঙ্গায়ন

টাঙ্গাইলের ডেঙ্গি মাশি ----বসে মংলির গায়ে
সূঁচটিকে সে শক্ত করে---নেহাত পেটের দায়ে
সেকি তা আর জানে?
রক্ত খাওয়ার মানে?
মশক কুলের বিপদ ঘনায় ডেঙ্গি পিসির দায়-এ!



স্বর্গাদপি গড়িমসি

ভারতবর্ষ এক মন্থর দেশ সবেই ঢিমেতাল--
আজকে কোন কর্ম করলে ফল ধরে না কাল!
আচ্ছা বাবা ঠিক আছে--
দেখা যাবে সব কাজে--
(তাই )সাধু সেজে খোস মেজাজে ঘুরছে যে ভেজাল!



বঞ্চনা

পথের ধারে  হাজার শিশু করতে থাকে ভিক্ষা।
সভ‍্য সমাজ নেয় না তাদের আপন করার দীক্ষা।
খাবার জন‍্য পাতে হাত
পরিবর্তে খায় সে লাথ
যুগে যুগে চলতে থাকা এটা কি যে শিক্ষা!



তপ্ত তামা

তপ্ত আকাশ একটা যেন উপুড় করা কড়াই।
গরম আঁচের উপর তারে কে দিলো গো চড়াই।

সারাটা দিন থাকবো আঁচে
জ্বলে পুড়ে থাকবো বেঁচে

পশলা এলেই মশলা সমেত শরীর খানা জুড়াই।




স্টেজ

কান্না-হাসি ভাবের রাশির উঠছে সুর ঝংকার
আঁধার আলো মন্দ-ভালোয় মানুষ কত রংদার!
বৈচিত্র্য ময় ধরাতলে
আসছে মানুষ দলে দলে
চাপছে স্টেজে যাচ্ছে নেমে --মায়াবী এই সংসার!



মানবেন্দ্র ব‍্যানার্জী
রামকৃষ্ণপল্লী, অরবিন্দ নগর (উঃ)
বাঁকুড়া,৭২২১০১

No comments:

Post a Comment